ফরিদপুরে বসে পুরো বিশ্বে কোরআন শেখান হাফেজ রাফি

বাংলাদেশে বসে অনলাইনে ক্লাস করে বিশ্বের নানা ডিগ্রি নেওয়া যাচ্ছে। একই প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়ে এবার ফরিদপুরে বসে পুরো বিশ্বে কোরআন শেখাচ্ছেন হাফেজ রাফি। প্রতিদিন ২০০ শিক্ষার্থীকে কোরআন শেখাচ্ছে তার প্রতিষ্ঠিত ‘তারতিল কোরআন একাডেমি’।

অনলাইনে কোরআন শিখছে এক ক্ষুদে শিক্ষার্থী

করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে যখন পুরো বিশ্বে অনলাইন শিক্ষার জোয়ার, সে সময়ই যাত্রা শুরু হয় হাফেজ মুস্তাফিজুর রহমান রাফির কোরআন শেখানোর কার্যক্রম। মূলত তার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীর মামাই তাকে এ কাজে অনুপ্রাণিত করেন। প্রথমে নিজের মেয়েকে কোরআন শেখানোর কথা বলেছিলেন তিনি। পদ্ধতিটা রাফির জানা ছিল না। মামাই তাকে পুরো পদ্ধতিটা বুঝিয়ে দেন। এরপর থেকে ফরিদপুরে বসে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মামাতো বোনকে কোরআন পড়াতে থাকেন রাফি। এক মাস পর সে ক্লাসে যুক্ত হয় আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী।

সেই শুরু। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রাফিকে। ২০২১ সাল পর্যন্ত একাই চালিয়ে যাচ্ছিলেন এ কার্যক্রম। পরে শিক্ষার্থী আরও বাড়তে থাকলে রাফি একে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। অনলাইনে কোরআন শেখার এই প্ল্যাটফর্মের নাম দেন ‘তারতিল কোরআন একাডেমি’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নামে পেজও খুলেন। মূলত সেখানেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যোগাযোগ করেন।

তারতিল কোরআন একাডেমি

শুরুটা একা করলেও এখন শিক্ষার্থী অনেক বেড়ে যাওয়ায় তাদের সুষ্ঠুভাবে পাঠদানের সুবিধার্থে আরও শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। বর্তমানে চারজন নারীসহ ২০ জন শিক্ষক তারতিল কোরআন একাডেমির মাধ্যমে কোরআনের ক্লাস নিচ্ছেন।

মূলত গুগল মিটে লাইভ ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়ান রাফি ও তার সহকর্মীরা। প্রত্যেকের জন্য আলাদা ক্লাস নেন তারা। কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় মাসয়ালা, নামাজ ও দোয়াও শেখানো হয় এ একাডেমিতে। রাফি জানান, সাধারণত ছয় মাসের মধ্যে এক শিক্ষার্থী কোরআন শিখে নিতে পারেন। তবে শিক্ষার্থীদের মেধা অনুসারে তা কম বেশি হতে পারে।

এ একাডেমির বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই প্রবাসী। তাদের অধিকাংশই বাংলা বলতে পারে না। ফলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দরকার ইংরেজির। কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করা রাফি ইংরেজিতেও পারদর্শিতা অর্জন করেছেন। ফলে প্রবাসী এসব শিক্ষার্থীকে খুব সহজেই পাঠ দান করতে পারেন। বর্তমানে দেশের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে আরব আমিরাতের অনেক শিক্ষার্থী তারতিল একাডেমির মাধ্যমে কোরআন শিখছে।

শুরুতে কম বয়সী শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিলেও পরবর্তী সময়ে বয়স্করাও এই পদ্ধতিতে কোরআন শেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাদেরকেও নিরাশ করে না তারতিল একাডেমি। এ পর্যন্ত ৫০০ থেকে ৬০০ শিক্ষার্থী এ একাডেমির মাধ্যমে কোরআন শিখেছে।

হাফেজ রাফির স্বপ্ন এখন আরও অনেক বড়। তিনি বলেন, স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কোরআন ও ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দিতেই আমরা এই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নতুন এই প্রজন্ম যেন ধার্মিক হিসেবে গড়ে ওঠতে পারে, সেজন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা। রাফি স্বপ্ন দেখেন, এই একাডেমির মাধ্যমে আগামীতে প্রতিদিন ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে কোরআন শিখবে।