১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে নেমে এসেছিল ভয়ঙ্কর এক কালো রাত। রাজধানীর ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। সেই রাতে ঘাতকদের বুলেটের শব্দে স্তব্ধ হয়ে উঠেছিল চারপাশ।

house no. 677 road no. 32 dhanmondiধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি

আজ ১৫ আগস্ট, মঙ্গলবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এজাহারে সেই কালো রাতের ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী (রেসিডেন্ট পিএ) আ ফ ম মোহিতুল ইসলাম। কী ছিল তার বর্ণনায়, চলুন জেনে নেওয়া যাক।

১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে ডিউটিতে ছিলেন আ ফ ম মোহিতুল ইসলাম। ১৪ আগস্ট রাত বারোটার পর ঘুমাতে যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এজহারে মোহিতুল বলেন, বঙ্গবন্ধু ঘুমাতে যাওয়ার পর আমিও ঘুমিয়ে পড়ি। পরে ভোর সাড়ে চারটা কী পাঁচটার দিকে টেলিফোন মিস্ত্রি আমাকে জাগিয়ে তুলে বলেন, প্রেসিডেন্ট সাহেব আপনাকে ডাকছেন।

বঙ্গবন্ধু ফোনে আমাকে বললেন, সেরনিয়াতের বাসায় কারা যেন হামলা চালিয়েছে। এ কথা শুনে আমি দ্রুত পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের চেষ্টা করলাম। কিন্তু পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। এরপর গণভবনে যোগাযোগের চেষ্টা করলাম। কিন্তু সেখানেও যোগযোগ করতে পারছিলাম না। তখন বঙ্গবন্ধু ওপর থেকে নিচে নেমে এসে আমার কাছে জানতে চান, পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে কেন কেউ ফোন ধরেছে কিনা। এ সময় আমি ফোন ধরে হ্যালো হ্যালো বলে চিৎকার করছিলাম। তখন বঙ্গবন্ধু আমার হাত থেকে রিসিভার নিয়ে বললেন- আমি প্রেসিডেন্ট বলছি।

ঠিক তখনই জানালা দিয়ে একঝাঁক গুলি এসে ওই কক্ষের দেয়ালে লাগল। তখন অন্য ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন চিফ সিকিউরিটি মহিউদ্দিন।

এ সময় জানালা দিয়ে অনবরত গুলি আসা শুরু হয়। আমি আর বঙ্গবন্ধু মাটিতে শুয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ পর গুলিবর্ষণ বন্ধ হলে বঙ্গবন্ধু উঠে দাঁড়ান। আমিও উঠে দাঁড়াই।

ওপর থেকে কাজের ছেলে সেলিম ওরফে আবদুল বঙ্গবন্ধুর পাঞ্জাবি ও চশমা নিয়ে এসে। পাঞ্জাবি ও চশমা পরে বঙ্গবন্ধু বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ান। সেখানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, আর্মি, পুলিশ, এত গুলি চলছে তোমরা কি কর?

এ সময় শেখ কামাল বলল আর্মি-পুলিশ ভাই আপনারা আমার সঙ্গে আসুন। তখনই কালো পোশাক পরা একদল লোক এসে শেখ কামালের সামনে দাঁড়ায়।

মোহিতুল বলেন, আমি ও ডিএসপি নূরুল ইসলাম খান শেখ কামালের পেছনে ছিলাম। নূরুল ইসলাম পেছন থেকে টান দিয়ে আমাকে তার কক্ষে নিয়ে যায়। আমি ওখান থেকে উঁকি দিয়ে বাইরে দেখার চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে অনেকগুলো গুলির শব্দ শুনলাম। এ সময় গুলি বিদ্ধ অবস্থায় শেখ কামাল আমার পায়ের কাছে এসে পড়লেন। তিনি চিৎকার করে বললেন, ওদেরকে বলেন, আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল।

মোহিতুল ইসলাম আরও বলেন, ওই রাতে যারা আক্রমণ চালিয়েছিল তাদের মধ্যে কেউ ছিল কালো পোশাকধারী, আর কেউ ছিল খাকি পোশাকধারী। তখন বুঝতে পারি হামলাকারীরা আর্মির লোক।

এ সময় আবার গুলি বর্ষণ শুরু হয়, দেখি ডিএসপি নূরুল ইসলাম খানের পায়ে গুলি লেগেছে। নূরুল ইসলাম যখন আমাদেরকে রুম থেকে বের করে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছিলেন তখন মেজর বজলুল হুদা এসে আমার চুল টেনে ধরল। এরপর আমাদেরকে নিচে নিয়ে গিয়ে লাইনে দাঁড় করাল।

কিছুক্ষণ পর নিচে থেকেই আমরা বঙ্গবন্ধুর চিৎকার শুনতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে গুলির শব্দও। তখনই শুরু হয় মেয়েদের আত্মচিৎকার, আহাজারি।

এর কিছুক্ষণ পর শেখ রাসেল ও কাজের মেয়ে রুমাকে নিচে নামিয়ে আনা হয়। রাসেল আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমাকে মারবে না তো। আমি বললাম না তোমাকে কিছু বলবে না। আমার ধারণা ছিল অতটুকু বাচ্চাকে তারা কিছু বলবে না। কিছুক্ষণ পর রাসেলকে একটা রুমে নিয়ে যায় তারা। সেখানে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এর কিছুক্ষণ পর সব কিছু স্তব্ধ হয়ে আসে। মেজর বজলুল হুদা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা মেজর ফারুককে বলে, অল আর ফিনিশড।

পরে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল ফারুক রহমান জানান, খোন্দকার মোশতাকের নির্দেশে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু বাড়িতে ওই অভিযান চালিয়েছেন তিনি। অভিযানের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

ওই রাতে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধু, তার সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তাদের সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।

এছাড়া বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ ও সুকান্তবাবু, মেয়ে বেবি, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি, তার স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য প্রাণ হারান।। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। শোক দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১৫ আগস্ট ভোরে সারা দেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিল।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.