এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে জানলেন, তারা শিক্ষার্থী নন

দুই বছরের পড়াশোনা শেষ করে ২৫ জন শিক্ষার্থী গিয়েছিলেন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারেন, তারা আসলে কলেজের শিক্ষার্থীই নন। তাদের নাম নেই কোথাও। মূলত কলেজের দুই কর্মচারীর জালিয়াতির কারণে তাদের জীবন থেকে মূল্যবান দুটি বছর ঝরে গেল। ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজে।

প্রতারিত শিক্ষার্থীরা

জানা গেছে, বিধি মোতাবেক অনলাইনে আবেদন করে ভর্তির সুযোগ পাননি বেশকিছু শিক্ষার্থী। পরে তাদের ২৫ জনকে সরাসরি (অফলাইনে) বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজে ভর্তির কথা জানান সে কলেজেরই দুই কর্মচারী। পরে তাদের হাতে ভর্তির টাকা দিয়ে এসব শিক্ষার্থী ভর্তির রশিদও পেয়েছিলেন।

ভর্তির পর খাতায় তাদের নাম ওঠে। এরপর থেকে এসব শিক্ষার্থী অন্যদের সঙ্গে নিয়মিত ক্লাস, কলেজের পরীক্ষা সবকিছুতেই অংশগ্রহণ করে আসছিলেন। এই দুই বছরে তাদের ক্লাস বা লেনদেন কোনো কিছুতেই সমস্যা হয়নি। কিন্তু বৃহস্পতিবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (এইচএসসি) দিতে গিয়ে জানতে পারেন, তারা পরীক্ষা দিতে পারবেন না।

সরকারি শাহ সুলতান কলেজ

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাশেদুল হক, উম্মে হাবীবা, মিলন হাসান ও শারমিন আক্তার জানান, অনলাইনে কলেজে ভর্তির জন্য তাদের পছন্দ ছিল সরকারি শাহ সুলতান কলেজ। কিন্তু অনলাইনে সেখানে ভর্তির সুযোগ পাননি। পরে তারা কলেজে যোগাযোগ করলে অফলাইনে ভর্তি করানোর কথা বলে টাকা নেন কলেজের দুই অফিস সহকারী হারুন মিয়া ও আব্দুল হান্নান। এরপর গত দুই বছরে এইচএসসির ফরম পূরণসহ বিভিন্ন ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে তারা জানতে পারেন ভর্তিসহ দুই বছরের পুরো প্রক্রিয়াটাই ছিল ভুয়া। ফলে পরীক্ষার আগে প্রবেশপত্র হাতে পায়নি ওই ২৫ পরীক্ষার্থী।

ঘটনা আঁচ করতে পেরে মোবাইল ফোন বন্ধ করে পালিয়ে যান অভিযুক্ত কর্মচারী হারুন। অন্য অভিযুক্ত কলেজ কর্মচারী আব্দুল হান্নান বলেন, শিক্ষার্থীদের ভর্তির সব কাজ করেছে হারুন। আমি কেবল তাকে সহযোগিতা করেছি। এর বাইরে কোনো কিছুর জন্য আমি দায়ী নই।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সরকারি শাহ সুলতান কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর রেজাউন নবী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার খবরটি শুনেছি। তবে একেবারে শেষ মুহূর্তে জানার কারণে তাদের জন্য কিছুই করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের অভিযোগটি আমলে নেওয়া হয়েছে। এবার হয়ত কোনো কিছু করা সম্ভব হবে না। তবে তারা যেন আগামীতে পরীক্ষা দিতে পারে, সে চেষ্টা করা হবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।