সংকট চীনের, দুশ্চিন্তায় ভারত!

পুরো বিশ্ব যেখানে মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে সেখানে চীনের সংকট ভিন্ন রকম। তারা ভুগছে মুদ্রাসঙ্কোচন সংকটে। এ সংকট এতটাই বাড়তে শুরু করেছে যে, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হয়েও ঘাম ছুটতে শুরু করেছে ভারতের। দেশটির আশঙ্কা, আর কিছুদিন এভাবে চললে চীনের এই সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতও। খবর হিন্দুস্তানটাইমস।

মূল্যসঙ্কোচনের সঙ্কটে ভুগছে চীন

করোনার সময় অর্থনীতির গতি বজায় রাখতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল চীন। সে পদক্ষেপগুলোই এখন তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় দেশটিতে শুরু হয়েছে মুদ্রাসঙ্কোচন পরিস্থিতি। এ কারণে ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রা ইউয়ানের দাম ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে দিনকে দিন দাম কমছে জিনিসপত্রের।

মূল্যস্ফীতির জেরে যখন মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে, তখন মুদ্রাসঙ্কোচনকে আশীর্বাদ হিসেবেই মনে হয়। তবে দীর্ঘমেয়াদে বিষয়টি যে কোনো দেশের জন্যই ক্ষতিকর। এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া না গেলে পুরো অর্থনীতিই ভেঙ্গে পড়তে পারে। আর চীনের মতো এত বৃহৎ অর্থনীতির একটি দেশে সংকট দেখা দিলে তা নিশ্চিতভাবে প্রভাব ফেলবে তাদের সঙ্গে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে যুক্ত থাকা অন্য দেশগুলোর ওপরও।

চীন-ভারত বাণিজ্যের পরিমাণ নেহায়েত কম নয়

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন থেকে চলতি বছরে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অন্তত ৩৫ শতাংশ আসার কথা। অথচ মুদ্রাসঙ্কোচনের কারণে বেইজিংয়ের ওপর বিপুল ঋণের বোঝা চেপেছে। এই মুহূর্তে তাদের সম্মিলিত ঋণের পরিমাণ ১৩ লক্ষ কোটি ডলার। যা নিশ্চিতভাবেই দেশটির অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, মুদ্রাসঙ্কোচনের জেরে চীনের অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। কাঁচামাল সস্তা হয়ে পড়ায় এখন তারা অধিক উৎপাদন করছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি হচ্ছে না এত পরিমাণ পণ্য। ফলে অন্য দেশে পণ্য বিক্রিতে জোর দিচ্ছে বেইজিং। অন্যদিকে দেশটিতে আমদানির পরিমাণও কমেছে।

উভয় দিকেই আশঙ্কা দেখছে ভারত। কারণ একদিকে তারা ভারতে বেশি পরিমাণ পণ্য পাঠাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্টে চীনে ভারতের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬.৫ শতাংশ। ২০২২ সালের একই সময়ে সেই পরিমাণ কমে হয়েছে প্রায় অর্ধেক, ৩.৫ শতাংশ। উল্টোদিকে চীন অন্য দেশে রপ্তানি বাড়াতে চাইছে। দামে কম হওয়ায় এ পণ্যই বেশি আমদানি করতে চাইবেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। এতে একদিকে ভারতের বাজার যেমন চীনা পণ্যে ভরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তেমনি ভারতের ব্যবসায়ী-উৎপাদকদের ব্যবসায়ে লাল বাতি জ্বলার ভয় রয়েছে।

দুই প্রতিবেশী হলে চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তেমন ভালো নয়। প্রায় দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দেয়। তারপরও ভারত-চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ নেহায়েত কম নয়। তাই চীনের অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে ভারতের ওপর। সেই প্রভাবের ধরন নির্ধারণেই আপাতত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ভারতের অর্থনীতিবিদরা।