পুতিন: মন্দ কপাল নিয়ে জন্মেছিলেন মেধাবী প্রিগোজিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, প্রিগোজিন ছিলেন একজন মেধাবী ব্যবসায়ী। কিন্তু তিনি জন্মেছিলেন মন্দ কপাল নিয়ে। বিমান দুর্ঘটনায় ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের মৃত্যুর একদিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার তার সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। খবর আল জাজিরা।

পুতিন ও প্রিগোজিন

টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ওই ভাষণে পুতিন বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এ সময় প্রিগোজিনের ব্যাপারে তিনি বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রিগোজিনকে চিনতেন। তবে এই ব্যক্তি খুবই জটিল ভাগ্য নিয়েই জন্ম নিয়েছিলেন। সে কারণেই তিনি জীবনে মারাত্মক ভুল করে বসেছিলেন। বক্তব্যে ইউক্রেনে লড়াইয়ে ওয়াগনার গ্রুপের অবদানের কথাও উল্লেখ করেন পুতিন। তিনি জানান, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষ হতে সময় লাগবে। তারপরই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা যাবে।

স্থানীয় সময় গত বুধবার সন্ধ্যায় ‘এমব্রেয়ার লিগ্যাসি’ নামের একটি ব্যক্তিগত বিমান রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে যাওয়ার পথে বিধ্বস্ত হয়। প্রিগোজিনের ব্যক্তিগত ওই বিমানে তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তার ডান হাত হিসেবে পরিচিত দিমিত্রি উতকিনসহ মোট সাতজন যাত্রী। এছাড়া ক্রু ছিলেন তিনজন। বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আরোহী সবাই মৃত্যুবরণ করেন।

উদ্ধার অভিযান

মস্কো থেকে ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই পুরো বিশ্বের গণমাধ্যমে খবরটি জায়গা করে নেয়। তবে প্রথমে নিশ্চিত হওয়া যায়নি প্রিগোজিন সে তালিকায় ছিলেন কি না। পরে অবশ্য সব পক্ষই নিশ্চিত করে প্রিগোজিন সে বিমানে ছিলেন এবং বিমান বিধ্বস্ত হয়ে তিনিও নিহত হয়েছেন।

প্রিগোজিনের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে এখনও কিছু জানা যায়নি। তবে ওয়াগনার গ্রুপের টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোন দাবি করেছে, রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে বিমানটি ভূপাতিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যও দাবি করছে, প্রিগোজিনকে বহনকারী উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করা হয়েছে। তারা এজন্য রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসকে (এফএসবি) দায়ী করছেন। আর এর প্রাক্তন কর্মকর্তা পুতিনের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে এ বাহিনীতে। ফ্রান্স সরকারের মুখপাত্রও বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ করার যুক্তিসংগত কারণ তাদের কাছে রয়েছে। প্রিগোজিনের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় পুতিনের দিকে আঙুল তুলেছে সুইডেন, জার্মানি, পোল্যান্ড ও এস্তোনিয়াও।

ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়ার কারণে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে ওয়াগনার গ্রুপ সমালোচিতই ছিল। তবে গত ২৩ জুন রুশ সেনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পরই তার ব্যাপারে অনেকের সুরই পাল্টে যায়। বুধবার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে তার নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, পোল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। এসব দেশ এ ঘটনার জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে দায়ী করেছেন।

জার্মানিভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্তানোভায়া মন্তব্য করেন, যে যা-ই বলুক না কেন, সবাই এ ঘটনাকে পুতিনের প্রতিশোধ হিসেবেই দেখবেন। আর এ মৃত্যু রাশিয়ার সামরিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জন্য ফলপ্রসূ শিক্ষা হিসেবে কাজ করবে।