আপনি পড়ছেন

সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকারের প্রাণকেন্দ্র থেকে এক চীনা গুপ্তচরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের মতো দেশে এমন ঘটনায় পশ্চিমাদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশ্ন উঠছে, চীন ঠিক কীভাবে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে, তা নিয়ে।

map chinaম্যাপে চীনের অবস্থান

ব্রিটিশ গণতন্ত্রে চীনের ‘অগ্রহণযোগ্য’ হস্তক্ষেপ নিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংকে কড়া ভাষায় সতর্ক করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। যদিও ব্রিটিশ সংসদ সদস্যরা বলছেন, ঋষির এমন কথায় এশিয়ার পরাশক্তির সঙ্গে বৈরিতা আরও বাড়বে।

তবে গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে এবারই প্রথমবারের মতো পশ্চিমাদের তোপের মুখে পড়েনি চীন। চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন আকাশসীমায় নজরদারি বেলুন উড়ানোর অভিযোগ উঠে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে দুই পরাশক্তির সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে।

গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি চীনা গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনা সামনে এসেছে। এ কারণে বেশ কয়েকজন গুপ্তচরকে গ্রেপ্তার এবং বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। চীন ঠিক কীভাবে পশ্চিমাদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করছে, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেল অনলাইন।

সাইবার যুদ্ধ

গত বছরই চীনকে গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি জানায়, মার্কিন সরকারি ও বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বিস্তৃত, সক্রিয়, ও ক্রমাগত সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির হুমকি তৈরি করছে বেইজিং।

গবেষক ও পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের বাণিজ্য সম্পর্কিত গোপনীয় তথ্য হাতিয়ে নিতে তাদের ডিজিটাল ব্যবস্থা হ্যাকিংয়ের সক্ষমতা চীনের রয়েছে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও অন্যান্য মিত্ররা জানায়, মাইক্রোসফ্ট ইমেল সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করতে চীন চুক্তিবদ্ধ হ্যাকার নিয়োগ দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এজেন্টদের সংবেদনশীল তথ্যে প্রবেশাধিকার দিতেই এ কাজ করেছে বেইজিং।

মার্কিন সরকারের বিবৃতি ও গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চীনা গুপ্তচররা মার্কিন জ্বালানি বিভাগ, ইউটিলিটি কোম্পানি, টেলিকমিউনিকেশন ফার্ম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য হ্যাকড করেছে।

প্রযুক্তি ভীতি

প্রযুক্তি খাতে এমন উদ্বেগ রয়েছে যে চীনা রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গোপনীয় তথ্য সরকারের সঙ্গে শেয়ারে বাধ্য। ২০১৯ সালে চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কিত গোপনীয় তথ্য চুরির ষড়যন্ত্রসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। এরপরই মার্কিন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পণ্য সরবরাহে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতেও এই প্রতিষ্ঠানের সরঞ্জাম ব্যবহার কঠোরভাব নিরুৎসাহিত করা হয়। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে হুয়াওয়ে।

এ ছাড়া চীনের বাইটড্যান্স প্রতিষ্ঠানের টিকটক নিয়েও পশ্চিমাদের মাঝে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। বেশ কয়েক জন আইনপ্রণেতা ডেটা সুরক্ষা বিঘ্নিত হওয়ার ভয়ে এ অ্যাপটির বিরুদ্ধে সরাসরি নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন।

শিল্প ও সামরিক গুপ্তচরবৃত্তি

বিদেশ থেকে গোয়েন্দা তথ্য ও সংবেদনশীল প্রযুক্তি চুরি করতে বেইজিং চীনা নাগরিকদের ব্যবহার করে থাকে বলে দাবি করে আসছে বিশেষজ্ঞ, মার্কিন আইনপ্রণেতা ও মিডিয়া।
এদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল জি চাওকুন। গত জানুয়ারিতে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে আট বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি, এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে এমন আট ব্যক্তির তথ্য জিয়াংসু প্রদেশের নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের কাছে ফাঁস করে দিয়েছেন।

গত বছর মার্কিন ও ফরাসি মহাকাশ সংস্থার প্রযুক্তি চুরির দায়ে এক চীনা গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। ওই ব্যক্তির নাম জু ইয়ানজুন।
পাঁচ বছরের চীনের রাষ্ট্রীয় মদদে নেওয়া প্রকল্পে প্রধানের ভূমিকা পালন করার দায়ে জু ইয়ানজুনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ওই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল বিশ্বের অন্যতম প্রধান বিমান ইঞ্জিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জিই এভিয়েশন এবং ফ্রান্সের সাফরান গ্রুপ থেকে গোপনীয় বাণিজ্যিক তথ্য হাতিয়ে নেওয়া।

এ ছাড়া ২০২০ সালে রেথিয়নের প্রকৌশলী ওয়েই সানকে কোম্পানির ল্যাপটপে করে চীনে আমেরিকান ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সম্পর্কে সংবেদনশীল তথ্য নেওয়ার দায়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

রাজনীতিকদের ওপর নজরদারি

বিভিন্ন গোপন তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যবসায়িক অভিজাতদের ওপরও নজরদারি করে চীন। এসব অভিজাত ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য দেশের শাসক দল সিসিপির প্রয়োজন হতে পারে, এমন তাগিদ থেকেই এ কাজ করে বেইজিং।

বিদেশে চীনা পুলিশ স্টেশন

চীনা প্রবাসীদের ওপর নজরদারি করতে বেইজিং বিদেশের মাটিতে শতাধিক পুলিশ স্টেশন স্থাপন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এই তথ্য সামনে নিয়ে আসে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্পেনভিত্তিক এনজিও সেফগার্ড ডিফেন্ডারস জানায়, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সমালোচকদের নজরদারি করতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ৫৪টি পুলিশ স্টেশন স্থাপন করেছে বেইজিং। এসব পুলিশ স্টেশনের মাধ্যমে চীনা নাগরিকদের হয়রানি, এমনকি জোরপূর্বক দেশেও ফেরত পাঠানো হত। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে বেইজিং।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.