‘ভুয়া মামলায়’ ডিবি পুলিশের ৯ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

রাজধানীর ফকিরাপুলে অভিযান চালিয়ে ২৫ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করেছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার একটি দল। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরে তদন্তে জানা যায় এটি একটি ‘ভুয়া মামলা’। এ ধরনের কোনো অভিযান ছিল না। ওই দুই ব্যক্তিকে ফাঁসানোর জন্য মামলাটি করা হয়েছে। খবর প্রথম আলো।

ফাইল ছবি

দুজনকে ভুয়া মামলায় জড়ানোর অভিযোগে ডিবি পুলিশের নয় সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন ওই দুই আসামি।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ফকিরাপুল মাছ বাজারের কাছে ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে স্থানীয় হোটেল বন্ধু আবাসিকের ম্যানেজার হাসান মজুমদার ও হোটেলের কর্মচারী সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে। পরের দিন মামলা করা হয়। অভিযানে আড়াই লাখ টাকার জাল মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

তবে ওই দিন এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন মামলার আসামিরা। তারা জানান, পুরো ঘটনাটি ঘটেছে হোটেল বন্ধু আবাসিকের রিসেপশনে। কয়েকজন সাদা পোশাকধারী সেখানে গিয়ে দুজনের বিরুদ্ধে হোটেল ব্যবসার নামে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। তখন ডিবি পুলিশের সদস্যরা তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। হাসান ও সোহেল ঘুষ দিতে অস্বীকার করলে ডিবি পুলিশ সদস্যরা তাদের হাতকড়া পরিয়ে সেখান থেকে তুলে নিয়ে যায়। পুরো ঘটনাটি হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়েছে।

ভুয়া মামলা, ভুয়া সাক্ষী

ডিবি পুলিশ তদন্ত শেষে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে হাসান ও সোহেলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। আদালত ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর হাসান ও সোহেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। প্রসিকিউশন আদালতে ১২ জন সাক্ষী হাজির করে।

তবে ডিবি পুলিশ অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন ডিবি পরিদর্শক তপন কুমার ঢালীসহ ডিবি পুলিশের ওই ৯ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত-১৫-এর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক তেহসিন ইফতেখার এ আদেশ দেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুস সালাম খান সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন।

ডিবি পুলিশের নয় সদস্যরা হলেন, ডিবি পুলিশের পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী, উপ-পরিদর্শক দেওয়ান উজ্জল হোসেন, সহকারী উপ-পরিদর্শক জিয়াউর রহমান, সোহেল মাহমুদ, আবুল বাশার, মমিনুল হক, নাজমুল হক প্রধান, কনস্টেবল নয়ন কুমার ও গোলাম সারোয়ার।

তদন্ত শেষে আদালত বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তারা জনগণ ও তাদের সম্পত্তি রক্ষা না করে হাসান মজুমদার ও সোহেল রানার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন। আদালতে মিথ্যা অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। এমনকি মিথ্যা সাক্ষীকেও আদালতে হাজির করা হয়েছে।

আইনজীবী আবদুস সালাম খান বলেন, তপন কুমার ঢালীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) সম্বোধন করে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আদালতের চিঠির পর তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারে পুলিশ।

অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

ডিএমপির অভ্যন্তরীণ তদন্তে দেখা গেছে, পুলিশ পরিদর্শক তপন কুমার আসামিদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা করেছেন এবং তার সহযোগীরা আদালতে মিথ্যা জবানবন্দি দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী হাসান মজুমদার বলেন, ‘আড়াই লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধারের পুরো ঘটনাটাই ভুয়া। এরপরও তারা সোহেল ও আমাকে হাতকড়া পরিয়ে গ্রেপ্তার করে। এমনকি আমাদের রিমান্ডে রাখা হয়েছিল। আমরা কয়েক মাস জেলে ছিলাম। কিছু না করে আমাদের যে কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তা বর্ণনা করার কোনো শব্দ নেই।’