ইসরায়েলকেই দায়ী করেছে আরব দেশগুলো

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার আল-আহলি হাসপাতালে বোমা হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে আরব দেশগুলো। ১৭ অক্টোবর, মঙ্গলবার গভীর রাতে এই হাসপাতালটিতে একাধিক বোমা হামলায় ৫শ’ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। অবশ্য ইসরায়েল দাবি করেছে, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এই হামলার জন্য দায়ী।

গাজায় আর্তনাদ

আল-আহলি হাসপাতালে বোমা হামলার প্রতিক্রিয়ায় ১৮ অক্টোবর, বুধবার মিশর, জর্ডান, তিউনিসিয়া, লেবানন, মরক্কোসহ আরব দেশগুলোতে  ব্যাপক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর প্রতিশোধ নেওয়ার লক্ষ্যে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। তাদের এই হামলায় শিশুসহ হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আরব দেশগুলোর সাধারণ জনগণ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে। তারা ইসরায়েলের এই বর্বরতার নিন্দা জানাতে রাস্তায় নেমে এসেছে। আর আরব সরকারগুলোও এবার জনগণের মনের কথা শুনতে পারছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।   

এমনকি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন আরব রাষ্ট্রগুলোও আল-আহলি হাসপাতালে বোমা হামলার জন্য দেশটিকে দায়ী করেছে। 

মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি গাজার হাসপাতালে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বোমা হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা একটি বার্তায় তিনি এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসাবে বর্ণনা করেছেন। 

মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ফেসবুকে এক বিবৃতিতে হাসপাতালে ইসরায়েলি বোমা হামলার নিন্দা করেছে। এটিকে বেসামরিক স্থাপনায় ইচ্ছাকৃত বোমা হামলা এবং আন্তর্জাতিক ও মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে।

এদিকে মিশরের আল-আজহার কর্তৃপক্ষ ফেসবুকে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আরব এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর উচিত উদ্ধত ইউরোপীয় এবং আমেরিকানদের ওপর নির্ভরতা দূর করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা।' 

আরব লিগের প্রধান আহমেদ আবুল ঘেইত সতর্ক করে বলেছেন, ‘পশ্চিমকে অবিলম্বে এই ট্র্যাজেডি বন্ধ করতে হবে। আমরা যুদ্ধাপরাধের ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করছি এবং তাদের অপরাধীরা বিচার থেকে বাঁচতে পারবে না।'  

সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনও গাজার হাসপাতালে নৃশংস হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছে। এই দুটি দেশ ২০২০ সালে আমেরিকার মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি করে।  

আরব আমিরাতের জাতিসংঘ মিশন ১৮ অক্টোবর, বুধবার এক্সে দেওয়া একটি পোস্টে বলেছে, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত, আজ জারি করা একটি বিবৃতিতে, ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে, যার ফলে শত শত মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে।' বিবৃতিতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।    

কাতার হাসপাতালে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বোমাবর্ষণ এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের নৃশংস গণহত্যার কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে।

কুয়েতও এই বোমা হামলার তীব্র নিন্দা করেছে এবং ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে এই অমানবিক অনুশীলন বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ইসরায়েলি দখলদারিত্বের দ্বারা হাসপাতালে টার্গেট করাকে একটি যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা এবং আন্তর্জাতিক ও মানবিক আইনের লঙ্ঘন বলে নিন্দা করেছে।

সৌদি আরব ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত এই জঘন্য অপরাধের নিন্দা করেছে। সম্প্রতি দেশটি ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি আলোচনা স্থগিত করেছে।

অবশ্য ইসরায়েল এই হামলার জন্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীদের দায়ী করেছে। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ইসরায়েলি সরকারের এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

সূত্র: দ্য নিউ আরব