এবার ভোটে পর্যবেক্ষক তলানিতে, মাত্র ২১ হাজার

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ঠেকেছে তলানিতে। এবার দেশি-বিদেশি সংস্থা ও ব্যক্তিপর্যায়ে মোটামুটি ২১ হাজার পর্যবেক্ষক পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অথচ অতীতে দুই লাখের বেশি পর্যবেক্ষকও ছিলেন ভোটের মাঠে।

ভোটে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়েও সাড়া পায়নি ইসি

ইসির গণসংযোগ শাখার তথ্য মতে, এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে মোট ২০ হাজার ৭৭৩ জন দেশীয় পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এছাড়া বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ১৮৭ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক। এ পর্যবেক্ষকরা আগামী ৭ জানুয়ারি সারাদেশে ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি মেনে যারাই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন, তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ২০০ জন বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এই সংখ্যা আরো বাড়বে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে ৯৬টি নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থা রয়েছে। এদের মধ্যে এবার নির্বাচন উপলক্ষে ২৯টি সংস্থাকে নতুন করে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে।

অনুমোদন পাওয়া ৯৬টির মধ্যে এবার নির্বাচনে কেন্দ্রীয়ভাবে ৪০টি পর্যবেক্ষণ সংস্থার ৫১৭ জন এবং কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় মিলিয়ে ৮৪টি পর্যবেক্ষণ সংস্থার ২০ হাজার ২৫৬ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয়   সংসদ   নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ৩৪ হাজার ৬৭১ জন দেশীয় পর্যবেক্ষক আবেদন করেন। ওই নির্বাচনে ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯২০ জনকে অনুমতি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।

২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৪৭ টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। বাকি ১৫৩ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন প্রার্থীরা। ওই ১৪৭ আসনেও ৮ হাজার ৯০০জন পর্যবেক্ষক ছিলেন।

আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে ১ লাখ ৬০ হাজার   এবং ২০০১   সালে ২ লাখ ১৮ হাজার পর্যবেক্ষক ছিলেন ভোটের মাঠে ।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, এবার নির্বাচন পর্যবেক্ষণে নিবন্ধন নিতে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৮৭ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ তালিকায় মার্কিন দূতাবাসের ২৯ জন এবং এনডিআই ও আইআরআইয়ের ১২ জন অন্তর্ভুক্ত আছে।

এছাড়া কমনওয়েলথের ১৭ জন, ঢাকাস্থ জাপানিজ দূতাবাসের ১৬ জন, ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের ১০ জন, নেপালের ৫ জন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪ জন রয়েছেন। বাকি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বেশির ভাগই ব্যক্তি উদ্যোগে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসছেন।

এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮০ জন বিদেশি এবং তাদের আওতায় ১১ বাংলাদেশি নাগরিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। ওই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ ১১টি দেশের ৬২ বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন। জাতিসংঘ, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালসহ ৫টি সংস্থার ১৮ বিদেশি পর্যবেক্ষক ওই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।

বিদেশি সাংবাদিক : এবার নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহে ৯১ জন বিদেশি সাংবাদিক আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে এএফপির ১২ জন, ভারতের এনডিটিভির দুজন, রয়টার্সের তিনজন ও বিবিসির চারজন রয়েছেন।

এবার নির্বাচন দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক কমার কারণ কী, এই প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, এবার নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিপূর্ণ হচ্ছে না। এ কারণেই এবার পর্যবেক্ষকের সংখ্যা কমেছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশের বড় দুই দল পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে। কেউ কাউকে ছাড় দেয় না। এ কারণে প্রয়োজন ছাড়া কেউ নির্বাচন পর্যবেক্ষক হতে ইচ্ছা পোষণ করছেন না।