শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তার এবং গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগের কোনো আইনি ভিত্তি নেই। হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই এসব অভিযোগ করা হয়েছে। মার্কিন মিডিয়া সিএনএনের সাংবাদিক ক্রিস্টিয়ান আমানপোরের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এই মন্তব্য করেছেন।

dr muhammad yunus 2ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ড. ইউনূস বলেছেন, ‘শুধু আমি এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করছি না বরং আমরা যে সমস্ত আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করেছি, স্থানীয় পরামর্শদাতারা, স্থানীয় আইনজীবীরা, আন্তর্জাতিক আইনজীবীরা, তারা সবাই একমত যে এই মামলাগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।'  

নোবেলজয়ী এই অধ্যাপক শ্রম আইন লঙ্ঘনবিষয়ক যেসব অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেন শ্রম বিভাগে তার কোনো নজির নেই। এই বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘সুতরাং, এটি এক ধরনের হয়রানি। এটি নিশ্চিত করার জন্য যে আমি বা আমরা এমন বার্তা পেয়েছি যে আমাদেরকে ভালোভাবে নেওয়া হচ্ছে না।' 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য তাকে চ্যালেঞ্জ করছেন বলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণে হয়রানির ঘটনা ঘটতে পারে কিনা জানতে চাইলে ইউনূস বলেছেন, ‘আমি রাজনীতির ময়দানে নেই। আমি রাজনীতিতে জড়িত এমন কোনো প্রমাণও নেই। আমি রাজনীতিতে যোগ দিতে আগ্রহী নই। এটি আমি বারবার বলেছি, যাতে কোনো বিভ্রান্তি না থাকে।'  

ইউনূস জানিয়েছেন, বিদেশে তার বন্ধুরা সারা বিশ্বে তার সামাজিক ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তরুণরা একটি ভিন্ন ধরনের পৃথিবী দেখতে চায়। এবং আমরা একটি নতুন সভ্যতা তৈরির কথা বলছি। এই সভ্যতাটি ভুল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে - এটি একটি আত্মবিনাশী সভ্যতা।'  

বিভিন্ন একাডেমিক এবং অর্থনৈতিক সার্কেলে ক্ষুদ্র ঋণের চর্চা নিয়ে যেসব সমালোচনা রয়েছে সেই বিষয়ে আমানপোর ইঙ্গিত করলে ইউনূস জানিয়েছেন, কিছু লোক ক্ষুদ্র ঋণের ধারণার ভুল ব্যাখ্যা করার কারণে এটি হয়েছিল।  

তিনি বলেছেন, ‘আমরা একটি সামাজিক ব্যবসা হিসাবে ক্ষুদ্র ঋণ তৈরি করেছি। আমরা ক্ষুদ্র ঋণ থেকে অর্থ উপার্জন করতে চাইনি। আমরা দরিদ্র লোকদের সাহায্য করতে, তাদের ব্যবসা তৈরি করতে, তাদের জীবন নিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। তবে কিছু মানুষ দরিদ্রদের থেকে অর্থ উপার্জনের জন্য ক্ষুদ্র ঋণকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।' 

তিনি আরও বলেছেন, ‘সঠিক ক্ষুদ্র ঋণ যেমন আছে তেমনি ভুল ক্ষুদ্র ঋণও আছে। সঠিক ক্ষুদ্র ঋণ একটি সামাজিক ব্যবসা। আপনি ক্ষুদ্র ঋণ থেকে অর্থ উপার্জন করতে চান না। তবে প্রোগ্রাম পরিচালনার জন্য সামান্য কিছু সুদ নেওয়া হয়।' 

ইউনূস উল্লেখ করেছেন, ক্ষুদ্র ঋণ কোনো দাতব্য কর্মসূচী নয়। তিনি তা চান না। কারণ দাতব্য কর্মসূচী খুব কমই দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে এবং তিনি চান তার উদ্যোগগুলো টেকসই হোক। 

তিনি যোগ করেছেন, ‘আমরা বিশ্বব্যাপী খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্রামীণ আমেরিকা ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে, আমার নিজের দেশে এগুলো ঠিকভাবে হচ্ছে না।' 

এই সাক্ষাতকারে ড. ইউনূস ১২ ফেব্রুয়ারির ঘটনার কথাও তুলে ধরেছেন। ওইদিন ৩৫ জন লোক গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি করে, গ্রামীণ টেলিকম ভবনে প্রবেশ করে এবং গ্রামীণ ব্যানারে আটটি সংস্থা দখল করে। 

তিনি বলেছেন, ‘যদি আপনার কোনো দাবি থাকে, যদি আপনার কোনো সমস্যা থাকে এবং এগুলো আইনি সমস্যা হলে আপনাকে আদালতে যেতে হবে। সেই সমস্ত সমস্যার নিষ্পত্তি খুঁজে বের করতে হবে। আপনি হঠাৎ করে কোনো বিল্ডিংয়ে ঢুকে বলতে পারেন না যে আমরা এটি দখল করে নেব।' 

তিনি জানান, রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত ভবনটির নিয়ন্ত্রণ আপাতত গ্রামীণ টেলিকমের কাছে ফিরে এসেছে। কিন্তু এরপরেও স্বস্তি পাচ্ছেন না ৮৩ বছর বয়সী গ্রামীণ ব্যংকের এই প্রতিষ্ঠাতা।    

তিনি বলেছেন, ‘৩ মার্চ থেকে একটি নতুন মামলা শুরু হচ্ছে। এটি দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা। আমরা দুর্নীতি, অর্থ পাচার এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ে অভিযুক্ত। এই সমস্ত মামলা পুরো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলে কারাদণ্ডের মেয়াদ দীর্ঘ হবে। আমরা জানিনা কখন এটি শেষ হবে।' 

উল্লেখ্য, শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলও করেছেন। তিনি এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছেন। 

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.