যেভাবে জলদস্যুদের কবলে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ

কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের দিকে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালীয় জলদস্যুর কবলে পড়েছে বাংলাদেশের জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। ছোট ছোট বোটে করে এসে তারা পুরো জাহাজটিকে কব্জা করেন নেয়। এখন পর্যন্ত জাহাজের সব নাবিক এবং ক্রু নিরাপদে আছেন বলে জানা গেছে।

এমভি আবদুল্লাহ

এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিম জানান, জলদস্যুরা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর জাহাজটি বর্তমানে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের কাছাকাছি অবস্থান করছে।

তিনি বলেন, কয়লাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিকে যাচ্ছিল। বুধবার দুপুরের দিকে হঠাৎই ছোট ছোট বোট নিয়ে জাহাজের দিকে আসতে থাকে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। পরে তারা ল্যাডার ব্যবহার করে জাহাজে উঠে পড়ে। এ সময় তাদের হাতে বন্দুক ছিল। জাহাজে উঠার পরই তারা জাহাজের সব কর্মীকে বন্দী করে।

এমভি আবদুল্লাহ

জানা গেছে, এ সময় জাহাজটিতে ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন আবদুর রশিদ। সে সময় জাহাজের একজন নাবিক হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজের মাধ্যমে মালিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বার্তা পাঠিয়ে জানায়, জলদস্যুরা আমাদের জাহাজ দখল করে নিয়েছে। আমাদের সবাইকে বন্দী করা হচ্ছে।

মেহেরুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, আটককৃত জাহাজের ক্রুরা সরাসরি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আর জলদস্যুদের পক্ষ থেকেও আমাদের সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।

এদিকে এ বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা খবরটি জানার পর থেকেই জাহাজের নাবিক ও ক্রুদের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের সবাই সুস্থ ও নিরাপদে আছেন। তাদের কিভাবে উদ্ধার করা যায় সে বিষয়ে আমরা আমাদের কূটনৈতিক চ্যানেল ও নৌবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।

নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা জিম্মিকারীদের উদ্দেশ্য জানতে পারিনি। তবে মেরিটাইম সেক্টরে আমাদের যতগুলো চ্যানেল আছে, তার সবগুলো চ্যানেল দিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

গভীর সমুদ্রে পণ্যবাহী জাহাজগুলোতে জলদস্যুদের হামলা সম্পর্কে সাবেক একজন ক্যাপ্টেন জানান, পণ্য বোঝাই থাকার করণে জাহাজগুলো সাধারণত ধীরে ধীরেই চলতে থাকে। এমভি আব্দুল্লাহর মতো আকারের জাহাজগুলোতে সাধারণভাবে ৩০-৪০ টন পণ্য বোঝাই থাকে। ফলে এসব জাহাজের গতি থাকে ১৮-২০ নটিক্যাল মাইল।

জলদস্যুরা যখন কোনো জাহাজকে টার্গেট করে, তখন তারা ছোট ছোট বোটে তিন-চারদিক থেকে আক্রমণ করে। একইসঙ্গে তিন চারদিক থেকে আক্রান্ত হয়ে জাহাজটিতে কর্মরত নাবিক-ক্রুরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। এ সুযোগে সহজেই জলদস্যুরা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এমভি আব্দুল্লাহর ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।

প্রত্যেকটা জাহাজেই সাধারণত মালিক প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য থাকে। সেখান থেকে বা নাবিকদের থেকে তথ্য নিয়ে জলদস্যুরা মালিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ফোন দিয়ে তাদের চাহিদার কথা জানিয়ে থাকে।

২০১০ সালে ৫ ডিসেম্বর কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিং গ্রুপের আরেকটি জাহাজও জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। নিকেলভর্তি ওই জাহাজের ২৫ জন নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে আটক করা করেছিল সোমালিয়ান জলদস্যুরা। দীর্ঘ চেষ্টার পর ১০০ দিনের মাথায় তারা জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।