মিয়ানমার জান্তা বিপাকে, একের পর এক সেনাঘাঁটি-শহর বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারে রাখাইন, কারেন, শানসহ বিভিন্ন রাজ্যে একের পর এক শহর ও সেনাঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে ক্ষমতাসীন জান্তা। সর্বশেষ বুধবার কারেন রাজ্যের পাপুন শহর দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। সেখানে আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) একটি সেনাঘাঁটির দখল নিয়ে লড়াই চলছে। এছাড়া  রাখাইনে আরাকান আর্মির হাতে একটি ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার হারিয়েছে জান্তা সেনারা। খবর ইরাবতীর।

কারেন রাজ্যের পাপুন শহর পুরো দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় কারেন রাজ্যে সক্রীয় বিদ্রোহী গ্রুপ কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) সশস্ত্র শাখা কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (কেএনএলএ) বুধবার কারেন রাজ্যের পাপুন শহরটি দখল করে নিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার পাপুন শহরের বাইরে পার্বত্য অঞ্চলে একটি সেনাঘাঁটি দখল নিয়ে লড়াই চলছে জান্তা ও বিদ্রোহী সেনাদের মধ্যে।

কেএনইউ মুখপাত্র সাও কালেল বলেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনী বুধবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন করছিল। সেই সুযোগে কেএনএলএ ও তার সহযোগীরা শহরটির দখল নিতে সক্ষম হয়।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে পাপুনের বাইরে একটি পাহাড়ের চূড়ায় জান্তা সেনাবাহিনীর পদাতিক ব্যাটালিয়ন-১৯ ফাঁড়ি আক্রমণ করেছে লিবারেশন আর্মি।

এদিকে রাখাইনে সক্রীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি বুধবার জানিয়েছে, বুথিডং শহরে সামরিক জান্তার লাইন ইনফ্যান্ট্রি ৫৫২ ব্যাটালিয়নের হেডকোয়ার্টার দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা।

টানা ৩২ দিন সংঘর্ষের পর গত সোমবার (২৫ মার্চ) ওই ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয় বিদ্রোহীরা। আকাশপথ, সমুদ্র, এমনকি স্থলপথে লড়াই চালিয়েও ঘাঁটিটি কব্জায় রাখতে পারেনি সামরিক জান্তা। ওই ঘাঁটি দখলের পর সেখানকার জান্তা সেনারা বেশির ভাগই পালিয়ে গেছে, কিছু সেনা আত্মসমর্পণও করেছে।

একই দিন তাহমান থার পুলিশ ফাঁড়িও দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। ফাঁড়িতে থাকা ১০০ পুলিশ সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে আরাকান আর্মির কাছে।

এছাড়া বাংলাদেশ সীমান্তের মংডু শহরে কীন-চং সেনা ঘাঁটি দখলের জন্যও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি। মাসখানেক আগে থেকেই এ লড়াই চলছে এবং এইরমধ্যে মংডু শহরটির বেশ কিছু এলাকা দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা।

এর আগে শনি ও রবিবার কাচিন রাজ্যে অন্তত তিনটি সেনাঘাঁটি বিদ্রোহীদের হাতে হারিয়েছে জান্তা সরকার। কাচিন ইনডিপেন্ডেন্ট আর্মি (কেআইএ) এবং কাচির পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (কেপিডিএফ) মিলে এসব লড়াই চালিয়েছে।

কেআইএ ও কেপিডিএফ জানিয়েছে, সহযোগী আরও কয়েকটি বিদ্রোহী গ্রুপ মিলে তারা মানসি টাউনশিপের মাই খংয়ে অবস্থিত ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটেলিয়ন ১২১ ঘাঁটি দখলে নিয়েছে। এছাড়া মোমাউক ও সুমপ্রাবুম শহরের দুটি ঘাঁটিও দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা।

মিয়ানমারে জাতিগত বিদ্রোহীরা ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে বিভিন্ন রাজ্যে জোটবদ্ধ হয়ে আক্রমণ শুরু করার পর থেকেই পায়ের নিচের মাটি সরতে থাকে সামরিক জান্তার। এরইমধ্যে রাখাইন রাজ্য, শান রাজ্য এবং দক্ষিণ চিন রাজ্যের পালেত্তা শহরজুড়ে বেশ কিছু ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর এবং সামরিক কমান্ড সেন্টারসহ সামরিক জান্তার প্রায় ১৭০টি ফাঁড়ি ও ঘাঁটি দখল করেছে বিদ্রোহীরা। দখলে নিয়েছে বেশ কিছু শহর।