যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো, জাতিসংঘে পূর্ণ সদস্যপদ পেল না ফিলিস্তিন

জাতিসংঘে রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার পথে আবারও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) নিরাপত্তা পরিষদে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিতে ভেটো প্রয়োগ করেছে ওয়াশিংটন। খবর রয়টার্স ও আল জাজিরা।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক

প্রস্তাবটিতে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রতি সুপারিশ করা হয়েছিল। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের ১২ সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড। ভেটো দেয় ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র।

নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মানুযায়ী, কোনো প্রস্তাবে ভেটো না পড়লে পাস হতে ১৫ সদস্যের মধ্যে নয় ভোটই যথেষ্ট। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন- এ স্থায়ী পাঁচ সদস্যের কোনো একটি দেশ বিপক্ষে ভোট দিলে যথেষ্ট ভোট পেলেও ওই প্রস্তাব গৃহীত হয় না।

বর্তমানে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্ট্যাটাস একজন পর্যবেক্ষক সদস্য। ২০১২ সালেই কার্যত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভ করে ফিলিস্তিন। তবে পূর্ণ সদস্যপদ পেতে হলে নিরাপত্তা পরিষদ এবং সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। ইতোমধ্যেই  তারা সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন লাভ করেছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদে ভোটো দেওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।

ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার প্রস্তাবে ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র যুক্তি দিচ্ছে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে। তবে দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা বন্ধ থাকায় তা কোন পথে এগোতে পারে, সে বিষয়ে তারা কিছু জানায়নি।

ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদের প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দেখিয়ে দিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে তারা আসলে কী ভাবে। ওয়াশিংটন সবসময়ই মনে করে, ফিলিস্তিনিরা নিজস্ব রাষ্ট্র পাওয়ার যোগ্য নয়। তারা কেবল ইসরায়েলের স্বার্থই উপলব্ধি করতে পারে।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্সি যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, মার্কিন ভেটো পুরোপুরি অন্যায্য, অনৈতিক ও অযৌক্তিক। তবে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভেটো দেওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বরং ফিলিস্তিনের প্রস্তাবকে লজ্জাজনক বলে অভিহিত করেন।

ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদের বিষয়টিকে সমর্থন করে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, সাম্প্রতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন, কার্যকর ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে স্থায়ী শান্তি খোঁজার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করাটাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, দুই রাষ্ট্র বিষয়টির সমাধানে অগ্রগতি সাধনে ব্যর্থতা পুরো অঞ্চলজুড়ে কোটি কোটি মানুষের জন্য ঝুঁকি ও অস্থিরতাই বাড়াবে।