সাঁওতাল পল্লীতে অগ্নিকাণ্ড: গাইবান্ধার এসপিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ

বহুল আলোচিত গাইবান্ধার সাঁওতাল পল্লীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আশরাফুল ইসলামকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে গাইবান্ধা জেলায় সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেওয়ার দিন চামগাড়ি এলাকায় যেসকল পুলিশ সদস্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন তাদেরও প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন আদালত।

আজ মঙ্গলবার বহুল আলোচিত সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আগামী ৯ মার্চ আদালত এই বিষয়ে পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন। আজ আদালতে রিট আবেদনের ওপর শুনানি পরিচালনা করেন আইনজীবী এ এম আমিনউদ্দিন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

আইনজীবী আবু ওবায়দুর রহমান বলেন, 'মহামান্য আদালত এসপিসহ পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহারের পাশপাশি এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সদর দফতরের প্রতি আদেশ দিয়েছেন।' গত বছরের গত ৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর সুগার মিলের অধিগ্রহণ করা জমিতে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সাঁওতালদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের অনেক হতাহত হন।

গত ৩১ জানুয়ারি আদালতে প্রকাশ করা বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'সাঁওতালদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনায় কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি এবং ঘটনার সময় দায়িত্ব পালন করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য দায়ী। আগুন লাগানোর সঙ্গে পুলিশের দুজন এবং গোয়েন্দা পুলিশের একজন সদস্য সক্রিয়ভাবে জড়িত।' হাইকোর্ট প্রতিবেদনটির অনুলিপি সংশ্লিষ্টদের সরবরাহ করতে সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দিয়ে আজ ৭ ফেব্রুয়ারি আদেশের জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন।

গত ১৬ নভেম্বর আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), ব্রতী সামাজিক কল্যাণ সংস্থা ও অ্যাসোসিয়েশন অব ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সাঁওতালদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট করে। আলোচিত এই রিটের শুনানি অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দিচ্ছেন এমন বেশকিছু ছবি দেশি-বিদেশী গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ছবিগুলো আদালতের নজরে আনা হলে গত ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন।

পরে গাইবান্ধার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনার তদন্ত করে ৩০ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদনটি দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, 'আল জাজিরা টেলিভিশনে প্রচার হওয়া ভিডিও ক্লিপ দেখে জানা যায়, কিছু পুলিশ সদস্য ও দুইজন সাধারণ পোশাকধারী সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন লাগানোয় সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। অনেক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা আগুন না লাগালেও আগুন নেভানোর কোন চেষ্টা করেননি।'