সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় আ. লীগ উদ্বিগ্ন নয়

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে চায় না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার বেশ সুসংহত রয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। এই প্রেক্ষাপটে সাবেক একজন সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কোনো প্রভাব সরকারের ওপর পড়বে না বলেই তারা মনে করেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা

এ বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুজন ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও মন্ত্রিসভার একজন সদস্য মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের পেছনে অবশ্যই কিছু রাজনৈতিক দিক রয়েছে। তবে সরকারের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এ নিয়ে এমনকি দল বা সরকারের অভ্যন্তরেও কোনো আলোচনা হয়নি। নির্বাচনের আগে এ নিষেধাজ্ঞা এলে আমলাদের ওপর কিছুটা প্রভাব পড়তে পারত।

বিশ্বস্ত সূত্রগুলো বলছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই আজিজ আহমেদের ভিসা বাতিল হওয়ার খবর ছিল। যুক্তরাষ্ট্র এবার কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে তার পরিবারের সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করেছে। তাই এটাকে হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ হিসেবে দেখার প্রয়োজন নেই। এছাড়া আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঘোষিত বাংলাদেশিদের জন্য নতুন মার্কিন ভিসা নীতির অংশ হিসেবে আসেনি।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, `আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেমনটি বলেছে, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশনকে ঘোষণার আগেই অবহিত করা হয়েছিল। জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ভিসা নীতির বাস্তবায়ন নয়। বরং এটা অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন অ্যাক্টের বাস্তবায়ন। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।'

তবে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অনুমান করা কঠিন। দুই দেশের সরকারের মধ্যকার সব টানাপোড়েনের সমাধান হয়ে গেছে বলে ধরে নেওয়া ভুল হবে।

এটি ভিসা নীতির বাস্তবায়ন না হলেও বাংলাদেশ সফরে আসা মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সফরের এক সপ্তাহের মধ্যেই এসেছে, যা এই পদক্ষেপের পেছনে কিছু রাজনৈতিক দিক নির্দেশ করে। তাই সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে বলে তারা মনে করেন।

উল্লেখ্য, জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরের পর ভিসা নীতির ঘোষণা আসে। মার্কিন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে। এরপরই ভিসা নীতির ঘোষণা আসে।

এবার দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ওপর জোর দেন। তবে তার সফরের এক সপ্তাহের মধ্যেই সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসে।

তাই আওয়ামী লীগের একটি অংশ মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র তারা যা-ই বলুক না কেন, তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি বা পরিকল্পনা থেকে সরে আসেনি।

ক্ষমতাসীন দলের কেউ কেউ বলছেন, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা হয়ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের মনোভাবের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসেছে।

প্রথম আলো থেকে অনুদিত