গাড়ি আমদানিতে ৩৬ বছরের সুবিধা হারাচ্ছেন এমপিরা

টানা ৩৬ বছর ধরে গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছেন দেশের সংসদ সদস্যরা। তবে সেই সুবিধা বাতিল হচ্ছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে। এমপিদের গাড়ি আমদানিতে নতুন বাজেটে ৪০ শতাংশ শুল্ক ও ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এমপিদের গাড়ি আমদানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক-ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব নতুন বাজেটে

জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তাতে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক কর অব্যাহতি বিদ্যমান রয়েছে। কর অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা হ্রাস করে কেবল আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ এবং মূসক (মূল্য সংযোজন কর) ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি। এজন্য বিদ্যমান প্রজ্ঞাপন বাতিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করার সুপারিশ করা হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী উল্লেখ করেন, সর্বস্তরে কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য সবাইকে রাজস্ব প্রদানে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সামনে থেকে তাতে নেতৃত্ব দেওয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের লক্ষ্যে আশা করছি, সংসদ সদস্যরা সব ধরনের শুল্ক কর ছাড়াই গাড়ি আমদানির প্রাধিকারে কিছুটা পরিবর্তন ঘটিয়ে মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এই উদ্দেশ্যে এমপিদের গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কর অব্যাহতির সুবিধা সংক্রান্ত বিধানটিতে পরিবর্তন আনা যেতে পারে। সেজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে এ সংক্রান্ত বিধান দ্য মেম্বারস অব পার্লামেন্ট (রেমুনেরেশন অ্যান্ড অ্যালাউন্সেস) অর্ডার, ১৯৭৩-এ প্রয়োজনীয় সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

১৯৮৮ সালের ২৪ মে তৎকালীন সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক ও কর অব্যাহতি দেয়। এ সুবিধায় ২০০৯ সাল থেকে চলতি ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত বিগত ১৫ বছরে ৫৭২টি গাড়ি আমদানি করেছেন এমপিরা। এসব গাড়ির মূল্য ছিল ৩৯৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা থাকায় এসব গাড়িতে সরকার শুল্ক হারিয়েছে ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।

সাধারণ নাগরিকদের এসব গাড়ি আমদানি করতে ১০০ থেকে ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক গুণতে হয়। এর বাইরেও গাড়ির ইঞ্জিন ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে দিতে হয় নানাবিধ সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট। তাতে গাড়ির দাম বেড়ে দাঁড়ায় বহুগুণ।

জানা গেছে, শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে বেশিরভাগ এমপিই জাপান থেকে দামী দামী ব্র্যান্ডের গাড়ি আমদানি করেছেন। এসব গাড়ির মধ্যে টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, রেঞ্জ রোভার, মিতসুবিসি, পাজেরো অন্যতম। শেষ পর্যন্ত বাজেটের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা গেলে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক কর দিতে হবে।