প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর: আলোচনায় যেসব বিষয়
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বাংলাদেশ ও ভারতে নতুন সরকার গঠনের পর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি আগামী শনিবার দিল্লিতে মিলিত হচ্ছেন। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে আলোচনা হবে এই বৈঠকে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জ্বালানি খাতে সহযোগিতা আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে থাকবে।
ছবি - সংগৃহীত
বুধবার বিকেলে সরকারের এক উচ্চপদস্থ সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে ১০টিরও বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও নবায়ন হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এটি শেখ হাসিনার দ্বিতীয় দিল্লি সফর।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরটি সংক্ষিপ্ত হবে এবং সফরসঙ্গীদের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে কম হবে।
শনিবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি একটি একান্ত বৈঠকও অনুষ্ঠিত হবে। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর কমপক্ষে ১৪টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে। মোট ১০টিরও বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষরিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্তত চারটি হবে মেয়াদোত্তীর্ণ চুক্তির নবায়ন।
এই চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো জ্বালানি, যোগাযোগ, অর্থনীতি এবং সহযোগিতার অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বাক্ষরিত হবে।
বুধবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘দুই শীর্ষ নেতার আলোচনায় দুই দেশের সম্পর্ককে ভবিষ্যতে কোথায় নিয়ে যেতে চান, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকবে। তারা তাদের আলোচনায় এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করবেন। এর মধ্যে যোগাযোগ, পরিবেশ, মহাকাশ এবং নতুন ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার দিকনির্দেশনা থাকবে।’
তিস্তা নিয়ে নতুন প্রস্তাবের সম্ভাবনা
বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রগুলির পাশাপাশি, এবারের আলোচনায় তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধ এবং অন্যান্য সমস্যাও উত্থাপিত হবে।
তিস্তা চুক্তি সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এই বিষয়ে শিগগিরই ইতিবাচক ফলাফলের কোনো ইঙ্গিত নেই। তবে আশার কথা হলো, ভারত সম্প্রতি তিস্তা কেন্দ্রিক উন্নয়ন প্রকল্পে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
কয়েক বছর আগে চীন বাংলাদেশকে তিস্তা নদীর সম্প্রসারণ প্রকল্পের একটি প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে ভারতের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণে বাংলাদেশ এই বিষয়ে নীরব ছিল।
মে মাসে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা ঢাকা সফরের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেন, ভারত তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে।
ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, দিল্লি আলোচনায় ভারত তিস্তা সম্পর্কে একটি নতুন প্রস্তাব নিয়ে আসতে পারে।
বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পেলেও, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ভারতের পক্ষে ব্যাপকভাবে ঝুঁকে রয়েছে।
বাংলাদেশি পণ্যের ভারতীয় বাজারে প্রবেশাধিকার থাকলেও, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা একটি অন্তরায়। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সিইপিএ (কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট) চালুর ঘোষণা হতে পারে।
২০১০ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশকে ঋণ চুক্তির আওতায় অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। প্রায় ৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণের লাইন অফ ক্রেডিটের বাস্তবায়ন ধীর গতিতে চলছে।
গত কয়েক বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে ঋণ চুক্তির বাস্তবায়ন দ্রুততর করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু দিন ধরে দুই দেশের কর্মকর্তারা ঋণের লাইন দ্রুততর করার জন্য একটি নতুন চুক্তির রূপরেখা নিয়ে কাজ করছেন। তবে এবার এই চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বহুমাত্রিক যোগাযোগ
২০১০ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে সড়ক, রেল ও নৌপথে বহুমাত্রিক যোগাযোগের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে আসছে। পরবর্তীতে এর সঙ্গে জ্বালানি খাত যুক্ত হয়। ইতোমধ্যে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। এবারের আলোচনায় জ্বালানি খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং যৌথ বিবৃতিতে এসব বিষয় স্থান পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বন্ধুত্বের সেতু
হাসিনা-মোদি আলোচনায় বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের সেতু নির্মাণের বিষয়টি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে আলোচিত হতে পারে। খাগড়াছড়ির রামগড় এবং ভারতের ত্রিপুরার সাব্রুমের মধ্যে এই সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
দিল্লি সফরের সূচি
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, সফরের প্রথম দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
পরদিন শনিবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানানো হবে। এরপর তিনি রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন এবং দর্শনার্থী বইতে স্বাক্ষর করবেন।
এরপর হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। দুই নেতা সেখানে একান্ত আলোচনা করবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে একটি রাষ্ট্রীয় ভোজেরও আয়োজন করা হয়েছে। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ শংকরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন, যেখানে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে একান্ত আলোচনা করবেন।
দুই দিনের সফর শেষে শনিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লির পালম বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন।
প্রথম আলো থেকে অনূদিত
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.