প্রধানমন্ত্রী: জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করলে আমি মারা যাব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করলে তিনি মৃত্যুবরণ করবেন। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সকে (এসএসএফ) তাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি আমাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেন, তাহলে আমাকে গুলি করে হত্যা করার প্রয়োজন হবে না। আমি তবুও মারা যাব কারণ তারাই (জনগণ) আমার প্রাণ।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) এসএসএফ'র ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত দরবারে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি। আমার অন্য কোন শক্তি নেই। জনগণই আমার একমাত্র শক্তি। আমরা জনগণের শক্তিতেই রাজনীতি করি। তাই, আপনারা নিশ্চিত করবেন যেন আমি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন না হই।’

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, ক্ষমতার বাইরে থাকাকালীন সময়েও জনগণ তার সঙ্গে ছিল।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, একজন খুবই সাধারণ রিকশাচালক তার কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে তার নামে একখণ্ড জমি কিনেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, পরবর্তীতে তিনি সেই জমিতে একটি ঘর নির্মাণ করে সেই রিকশাচালককে তার মালিকানাস্বত্ব প্রদান করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘তাই, আমি এইসব মানুষদের আমার থেকে বিচ্ছিন্ন করতে দেবো না। তারাই আমাকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি যোগায়। সকলের এটা মনে রাখা উচিত।’

প্রধানমন্ত্রী এসএসএফ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা যেন দৃঢ়তা, কার্যক্ষমতা, শৃঙ্খলা, সততা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যদি দৃঢ়তা, সততা এবং দায়িত্ববোধ না থাকে, তাহলে সফল হওয়া সম্ভব হবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সবসময় এসএসএফ সদস্যদের নিরাপত্তার কথা ভাবেন কারণ তারা তার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেন।

তিনি আরও বলেন, তার ওপর একাধিকবার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে এবং তার দলের অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা স্মরণ করে বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্ৰেনেড হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ তার দলের ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত হন।

তিনি বলেন, তিনি এসএসএফ সদস্যদের সঙ্গে সকলের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার এসএসএফ সদস্যদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তার সরকার ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এসএসএফের জন্য প্রথম শ্যুটিং রেঞ্জ স্থাপন করে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমানে আধুনিক সরঞ্জামের মাধ্যমে এই শ্যুটিং রেঞ্জকে আরও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করেছি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের একটি সুন্দর এবং উন্নত জীবন প্রদান করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তার সরকার বর্তমানে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে যার মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আরও ভালো এবং নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক পরামর্শক মেজর জেনারেল (অবঃ) তারেক আহমেদ সিদ্দিকী এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।

এর আগে এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। ১৯৮৬ সালের ১৫ জুন রাষ্ট্রপতি নিরাপত্তা বাহিনী (পিএসএফ) নামে এই বাহিনীর যাত্রা শুরু হয় যা পরবর্তীতে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) নামে পরিচিত হয়।

সূত্র: বাসস