সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন।

prime minister sheikh hasina 37প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে স্পষ্ট করে বলেন, হত্যা, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত যেই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘কারা, কী উদ্দেশ্যে এ সংঘাত বাধিয়েছে, কারা দেশকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে, তা তদন্ত করে বের করা হবে।’

আট মিনিটের ভাষণে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা যেকোনো সময় সংঘাতময় পরিবেশ তৈরি করে তাদের ক্ষতি করতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী অভিভাবক, শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করেছে। আপিল বিভাগে শুনানির দিনও ঠিক হয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, আদালত শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শোনার সুযোগ তৈরি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ বিষয়টির সমাধানের সুযোগ রয়েছে। তাই এই আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন রাস্তায় বিক্ষোভ না করে।’

তিনি সকলের প্রতি ধৈর্য ধরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য অপেক্ষা করার অনুরোধ জানান।

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমাদের ছাত্রসমাজ সুপ্রিম কোর্ট থেকে ন্যায়বিচার পাবে, তারা হতাশ হবে না।’

তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা সকলের সহযোগিতায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা বহাল রেখে হাইকোর্ট সেই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে। সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে এবং আদালত শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করে।’

এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা আবারও কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার সর্বাধিক ধৈর্য ও সহনশীলতা দেখিয়েছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহযোগিতা করেছে। রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি পেশের ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাদের সুযোগ দেওয়া হয় এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুঃখজনক বিষয় হলো, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শুরু করে। যেহেতু বিষয়টি হাইকোর্টে বিচারাধীন, তাই সকলের প্রতি ধৈর্য ধারণ করার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, কিছু মহল এই আন্দোলনকে কে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে।

‘ফলে নিরীহ ছাত্রদের এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে সকল ঘটনা ঘটে গেছে, তা অত্যন্ত ক্ষুব্ধকর ও মর্মাহত করা। অহেতুক কত মূল্যবান জীবন হারিয়ে গেল। প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা আমি বোধ হয় সবার চেয়ে বেশি বুঝি।’

নিহতদের প্রতি গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।

গভীর কোমল কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আমি নিন্দা জানাই। যে সকল ঘটনা ঘটে গেছে, তা কখনোই কাম্য ছিল না।’

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ছাত্রদের কে হত্যার জন্য বহুতল ভবনের ছাদ থেকে নৃশংসভাবে নিচে ফেলে দেওয়া হয় এবং অনেক ছাত্রের পায়ের স্নায়ু কাটা হয়।

তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসীরা অনেক ছাত্রকে লাঠি এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে একজন মারা যায়, অনেক জীবন মৃত্যুর সাথে পাল্লা দিয়ে বেঁচে যায়। ঢাকা, রংপুর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবন এবং ছাত্র হল আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় এবং ভাঙচুর করা হয়।

তিনি বলেন, সাধারণ পথচারী, দোকানদারদের ওপর হামলা করা হয়, এমনকি রোগী বাহী অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখা হয়।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ছাত্রী হলে থাকা ছাত্রীদের উপর হামলা এবং নির্যাতন চালানো হয়। আবাসিক হলে প্রভোস্টদের ওপর হামলা এবং মৃত্যুর ভয় দেওয়া হয়। শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিও স্টেশন একযোগে সম্প্রচার করে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.