কোটা আন্দোলন: সারাদেশে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচির মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্যদের হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত এবং শত শত আহত হয়েছেন।

বাড্ডা ও যাত্রাবাড়ীর ছবি

ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে চারজন উত্তরায়, একজন ধানমন্ডিতে, একজন বাড্ডায়, একজন যাত্রাবাড়ীতে, ঢাকার উপকণ্ঠে সাভারে একজন, নরসিংদীতে একজন এবং মাদারীপুরে একজন।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এর আগে মঙ্গলবারের সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হন। সব মিলিয়ে মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবারের দুই দিনের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬ জনে।

উত্তরায় পুলিশ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চারটি মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মাহফুজা আরা জানান, চারজনকেই মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে কারও পরিচয় পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, তাদের বয়স বিবেচনা করে মনে হচ্ছে তিনজন ছাত্র এবং অপরজন অন্য পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

মাহফুজা আরও জানান, এ ঘটনায় আহত দেড় শতাধিক লোককে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং গুরুতর আহত চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ধানমন্ডিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের সময় ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হন। কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. নুরুন্নবী জানান, আহত মো. ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া (১৮) কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। তাকে ধানমন্ডির সিটি মেডিকেলে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বাড্ডায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের সময় এক মাইক্রোবাস চালক আহত হন। পরে তাকে বনশ্রীর ফারাজী হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ফারাজী হাসপাতালের উপ-মহাব্যবস্থাপক রুবেল হোসেন জানান, নিহত দুলাল মাতবর গাড়ি চালাতেন। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের সময় দুলাল বাড্ডা এলাকায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন।’

রুবেল আরও জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় দুলালকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় এবং কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি জানান, নিহতের বুকে ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে এটি গুলির কারণে হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাড্ডা ও রামপুরায় সংঘর্ষে আহত অন্তত ১০০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

যাত্রাবাড়ীতে বৃহস্পতিবার ভোরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত ওই যুবককে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।

সাভারে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি'র (এমআইএসটি) এক শিক্ষার্থী নিহত হন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কর্মকর্তা ইউসুফ আলী মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমরা নিহত ব্যক্তির মরদেহ পেয়েছি। তার নাম ইয়ামিন, এমআইএসটি'র শিক্ষার্থী। তার শরীরে গুলির চিহ্ন ছিল। আহত অন্য পাঁচজনকেও আমরা হাসপাতালে ভর্তি করেছি।’

মাদারীপুরে বৃহস্পতিবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালালে একজন শিক্ষার্থী পালাতে গিয়ে স্থানীয় শকুনি হ্রদে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত দীপ্ত দে (২১) মাদারীপুর সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মাদারীপুরের গুদাম পরিদর্শক শেখ আহাদুজ্জামান বলেন, ‘ডুবুরির দল শকুনি হ্রদে ডুবে যাওয়া দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে।’

আহাদুজ্জামান আরও জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাছ থেকে মরদেহটি নিয়ে যান।

নরসিংদী জেলা হাসপাতাল ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদী জেলা কারাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে নরসিংদী নছিমা কাদির মোল্লা উচ্চ বিদ্যালয় ও হোমসের শিক্ষার্থী তাহমিদের মৃত্যু হয়। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ।।