মাত্র দুই দিন আগে রেমিট্যান্স দাম বাড়ানোর মৌখিক নির্দেশনার পর এবার পূর্ব নির্ধারিত হারের বেশি অর্থ পরিশোধ না করার জন্য ব্যাংকগুলিকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনকি কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই এই নির্দেশনা অমান্য করলে শাস্তির হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

bangladesh bank dolar 2ছবি - সংগৃহীত

কমপক্ষে চারটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের ফোন করে রেমিট্যান্স ডলার কেনার জন্য ১১৮ টাকার বেশি অর্থ পরিশোধ না করার জন্য মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কোষাগার বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, `বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই ব্যাংকগুলিকে শাস্তির হুমকি দিয়েছে, যদি তারা নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি হারে রেমিট্যান্স ক্রয় করে।'

ব্যাংকারদের মতে, বিদ্যমান আইন অনুসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ধরনের মৌখিক নির্দেশনা জারি করতে পারে না।

গত রোববার রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলিকে ডলারের জন্য বেশি হারে অর্থ পরিশোধ করতে বলেছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, জুলাই মাসের প্রথম ২৭ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১.৫৮ বিলিয়ন ডলার। এই হারে চলতি মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যেতে পারে। অথচ মে মাসে রেমিট্যান্স ছিল ২.২৫ বিলিয়ন ডলার এবং জুন মাসে ছিল ২.৫৪ বিলিয়ন ডলার।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, পাঁচ দিনের ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট, তিন দিনের ব্যাংক বন্ধ এবং রেমিট্যান্সের জন্য ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার না করতে প্রবাসীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রচারণার কারণে ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফোন করে আমাদের নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি অর্থ পরিশোধ না করার নির্দেশ দেয়। তারা আরও হুঁশিয়ারি দেয় যে, আমরা যদি বেশি হারে অর্থ পরিশোধ করি তাহলে আমাদের জরিমানা করা হবে।'

‘এই নির্দেশনার পরে, আমরা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলি থেকে নির্ধারিত হারে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম। তবে এই হারে আমরা খুব বেশি রেমিট্যান্স পাইনি। অথচ মাত্র দুই দিন আগেও আমাদের বলা হয়েছিল প্রবাহ বাড়াতে আরও বেশি হারে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করার জন্য,’ তিনি আরও যোগ করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতি পরিবর্তনের কারণে ডলার বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। একটি ব্যাংকের একজন নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের ঘন ঘন হস্তক্ষেপের প্রভাব বুঝতে পারছে বলে মনে হচ্ছে না।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘বারবার এভাবে ফোন করে নির্দেশনা দেওয়ার ফলে বাজার অস্থির হয়ে পড়ে। আমরা অতীতে দেখেছি যে, ঘন ঘন ফোন করে অর্থবাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।’

উদাহরণস্বরূপ, ব্যাংকার বলেন, গত বছর সেপ্টেম্বরে একইভাবে ফোনে দেওয়া নির্দেশনার কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গিয়েছিল। মনে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই অভিজ্ঞতা ভুলে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের হার কঠোর করার কারণে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে ১.৩৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। সাধারণত প্রতি মাসে গড়ে ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পায় বাংলাদেশ।

তবে একজন প্রবাসী বাংলাদেশি বুধবার জানান, জনপ্রিয় এক্সচেঞ্জ হাউস মানিগ্রাম প্রতি ডলার রেমিট্যান্সের বিপরীতে ১২০.৫৮ টাকা হারে অর্থ পরিশোধ করছে। এছাড়াও, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন প্রতি রেমিট্যান্স ডলারের বিপরীতে ১১৯.৫০ টাকা হারে অর্থ পরিশোধ করছে। গত তিন দিন ধরে, কোম্পানিগুলি ১১৯ টাকার উপরে হারে অর্থ পরিশোধ করছে।

বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, গত রোববার পর্যন্ত রেমিট্যান্স ডলারের দাম ছিল ১১৮.৬০ টাকা পর্যন্ত। এক মাস ধরে এই হার প্রায় একই ছিল। তবে ব্যাংকগুলিকে বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনতে বলা হওয়ার পর সেদিন এই হার বেড়ে ১১৯.৫০ টাকায় পৌঁছায়।

একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উল্লেখ করেন যে, ডলারের দামে ওঠানামা থাকবে এবং ডলার বাজার কোন দিকে যাচ্ছে তা বুঝতে কমপক্ষে কয়েক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন।

রেমিট্যান্স ডলারের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে বুধবার খোলা বাজারে নগদ ডলার বিক্রি হয় ১২৪ টাকা দরে। তবে, কিছু মানি চেঞ্জার হাউস ১২৫ টাকা পর্যন্ত নগদ ডলার বিক্রি করেছে বলে জানা গেছে। মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠানগুলিকে ১১৯ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করার নির্দেশ দিয়েছে।

বাংলাদেশ মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এস জামান বলেন, অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ডলারের দাম বাড়ার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই কারণে, আমরা সমিতির পক্ষ থেকে আমাদের সদস্য মানি চেঞ্জারদের কাছে একটি চিঠি জারি করেছি।’

টিবিএস অবলম্বনে

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.