দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সাবেক ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের সংবাদ সম্মেলন
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে সড়ক থেকে প্রত্যাহার করে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একদল ঊর্ধ্বতন ও মধ্যম সারির কর্মকর্তা।
ছবি - সংগৃহীত
আজ রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএসের রাওয়া ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ আহ্বান জানান। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বিবৃতি পাঠ করেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল মো. নুরুদ্দিন খান, সাবেক মেজর জেনারেল মো. আজিজুর রহমান, মেজর জেনারেল আবু কায়সার ফজলুল কবির, বীর প্রতীক মেজর জেনারেল জামিল ডি এ আহসান, মেজর জেনারেল রেজাকুল হায়দার, মেজর জেনারেল মুহাম্মদ আব্দুল মতিন, মেজর জেনারেল মুজাহিদ উদ্দিন, মেজর জেনারেল আবুল কালাম হুমায়ুন কবির, মেজর জেনারেল মাহবুবুল আলম, মেজর জেনারেল রুহুল আমিন, মেজর জেনারেল এ টি এম শহীদুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সখাওয়াত হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহেদুল আনাম খানসহ ৩০ জন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তারা।
বিবৃতিতে ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, ‘গত তিন সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে যে ভয়াবহ হত্যা, নির্যাতন, গুম এবং গণগ্রেপ্তার চলছে তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, ক্ষুব্ধ এবং মর্মাহত। অভিভাবক হিসেবে এসব ঘটনা প্রত্যক্ষ করে আমরা নিজেদের দায়িত্ব থেকে সরে যেতে পারি না। তাই আমাদের বিবেক আমাদের আজ জাতির কাছে হাজির হতে বাধ্য করেছে।’
‘এই মুহূর্তে আমাদের সীমান্ত অরক্ষিত। ছাত্র আন্দোলন দমন করতে সীমান্ত থেকে বিজিবি সদস্যদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে আরেকজন সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নুরুদ্দিন খানও বক্তব্য রাখেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়:
আমাদের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সকল প্রকার বৈষম্য, বিভেদ ও নিপীড়ন বিলোপের অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু আজ বিপরীত চিত্রই আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি স্তরেই এসব ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ ভয়াবহ অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সুশাসনের অভাবের চাপ সহ্য করতে পারছে না। এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য মানুষ আজ জীবন দিতেও ভয় পায় না। যারা এই দেশের মানুষকে এমন একটি চরম দুর্দশার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে তাদের বিচারের কাছে আনতে হবে। সামাজিক শান্তি, শৃঙ্খলা এবং আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে এবং একই সাথে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করে।
দেশের নীতিনির্ধারকদের যদি বিবেকবোধ থাকত তাহলে গত তিন সপ্তাহ ধরে রাষ্ট্র তার নিজস্ব নাগরিকদের ওপর যে অভূতপূর্ব নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে তা কখনোই ঘটত না। ক্ষমতাসীনদের দলীয় গুন্ডাদের হাতে উস্কানি এবং প্রতি-আক্রমণের ফলে শত শত মানুষ মারা গেছে এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়াও, বিক্ষোভকারীদের সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করে তাদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
কোনো বিবেকবান মানুষ এই দেশে এমন যুদ্ধাবস্থা সহ্য করতে পারে না। আমরা একে অপরের সাথে যুদ্ধ করতে পারি না। আমরা আমাদের প্রিয় দেশটিকে, এর রাজধানীকে, অন্যান্য শহর ও গ্রামকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে দিতে পারি না। তাই, আজ আমরা এই অবস্থান নিয়েছি এবং স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে আমরা এটা ঘটতে দেব না, ইনশাল্লাহ। সমাজের সকল স্তরের মানুষের সাথে নিয়ে আমরা এই দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।
জনগণ দেখেছে কিভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল এবং তাদের স্মৃতি থেকে কিছুই মুছে যাবে না। প্রথমত, ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। শুরু থেকেই, তারা ধৈর্য ধরেছে, রাষ্ট্রের আইন মেনে চলেছে।
অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দলের উস্কানিদাতারা ছাত্রদের ওপর বারবার হামলা চালিয়েছে, তাদের ওপর পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিজিবি ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারা হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে। আপনারা কি আমাদের বিশ্বাস করাতে চান যে এই দেশের মানুষ তাদের সন্তানদের ওপর যা করেছেন তা তারা ভুলে যাবে?
যখন গুন্ডারা পিছু হটতে শুরু করেছিল তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ঘটনাস্থলে নামানো হয়। তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা বিক্ষোভকারী ছাত্রদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যায়। যারা এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তাদের রক্ষা করার জন্য আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে কখনোই এগিয়ে আসা উচিত নয়। অতীতে কখনও আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের স্বদেশী ভাইদের ওপর তাদের বন্দুক তাক করে নাই।
আজ আমরা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা এই চক্রান্তের তীব্র বিরোধিতা করছি যেখানে একটি রাজনৈতিক সমস্যার সামরিকীকরণ করা হচ্ছে। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে মিয়ানমারের ঘটনাপ্রবাহ দেখছি এবং জানি যে এ ধরনের বোকামিপূর্ণ সামরিকীকরণের ফলে কিভাবে একটি সমৃদ্ধ জাতি ধ্বংসের মুখে ঠেকে হয়। সেখানকার সামরিক শাসকরা এখন মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন।
আমরা বর্তমান সরকারের কাছে অবিলম্বে সেনাবাহিনীকে রাস্তা থেকে প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি, কারণ চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘদিনের অনাদৃত অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যার ফসল। এই মুহূর্তে আমাদের সীমান্ত অরক্ষিত। ছাত্র আন্দোলন দমন করতে সীমান্ত থেকে বিজিবি সদস্যদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে সীমান্ত এখন খোলা রয়েছে যারা দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার সুযোগ নিতে চায়। সৈন্যদের অবিলম্বে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার এটাই সঠিক সময় কারণ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা থেকে যুদ্ধকালীন অবস্থানে যেতে তাদের যথেষ্ট সময় লাগবে। একইসাথে, চলমান সঙ্কট নিষ্পত্তির জন্য রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একটি লজ্জাজনক অভিযানে জড়িয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম নষ্ট করবেন না।
এ পরিস্থিতিতে সকল হত্যা, আহত, গুলি চালানো, হামলা, ভাঙচুর, অপহরণ, গ্রেপ্তার এবং হিংসাত্মক ঘটনার তদন্ত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হওয়া উচিত।
আমাদের সকল নাগরিকের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও স্নেহ রয়েছে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। জাতির ইতিহাসের এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা আমাদের সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানাই যেন তারা সর্বোচ্চ মানের শ্রদ্ধা, মর্যাদা এবং নীতি অনুসরণ করে তাদের কর্তব্য পালন করেন।
গত তিন দশক ধরে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যে সুনাম অর্জন করেছে তা আজ ঝুঁকির মুখে। আপনাদের জনগণের পাশে থাকতে হবে, তাদের মানবাধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির উপর আসন্ন বিপর্যয়ের শুধুমাত্র দর্শক হিসেবে থাকতে পারি না।
নিশ্চয়ই, আল্লাহ আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার এই পবিত্র কর্তব্য পালন করতে আমাদের সাহায্য করবেন।
আসুন আমরা একে অপরের জন্য প্রার্থনা করি।
আল্লাহ হাফেজ।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.