ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে অগ্নিসংযোগ

সোমবার সারাদেশে বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর উত্তেজিত জনতা তাদের ক্ষোভ প্রকাশের জন্য বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালায়। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাসভবনও এই ভাংচুরের হাত থেকে রক্ষা পায়নি, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

ছবি - ডেইলি স্টার

ভবনটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়েছিল, সেই বাসভবনে উত্তেজিত জনতা অগ্নিসংযোগ করে।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বাসভবন পাহারারত পুলিশ ও কর্মকর্তারা দ্রুত পালিয়ে যান। এরপর হাজার হাজার মানুষ বাসভবনে ভাঙচুর চালায়, সবকিছু লুট করে নিয়ে যায় এবং সংলগ্ন সড়কে উল্লাস করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অগ্নিনির্বাপক বাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে আসতে দেরি করায় আগুন দ্রুত পাশের ভবনগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে।’

জাদুঘর কমপ্লেক্সের আধুনিক সম্প্রসারিত অংশ, যেখানে একটি গ্রন্থাগার, অডিটোরিয়াম এবং ছবির গ্যালারি ছিল, তাও সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। সংলগ্ন একটি রেস্তোরাঁও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

ছবি - ডেইলি স্টার

ভবনের ভেতরে দেখা যায়, অনেক পোড়া বই মেঝেতে পড়ে আছে, আসবাবপত্র এবং ঘরের অনেক জিনিসপত্র হয় চুরি হয়ে গেছে অথবা পুড়ে গেছে। দরজা ও জানালা ভাঙচুর করা হয়েছে।

গতকালও বহু মানুষ বাসভবন পরিদর্শন করেন, ছবি তোলেন এবং দেয়ালে বিক্ষোভের গ্রাফিতি আঁকেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সদস্যদের জায়গায় দেখা যায়। তাদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন ছাত্ররা।

সেনা সদস্যদের জনতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা একজন ছাত্র মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করছি যাতে আর কোনো ভাঙচুর না হয়। আমরা বিকেল ৫টার পর স্থানটি বন্ধ করে দেবো এবং কোনো দর্শনার্থীকে আর প্রবেশ করতে দেবো না।’

ছবি - ডেইলি স্টার

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গ্রন্থাগার থেকে অনেক বই উদ্ধার করেছি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বইগুলো পাবলিক লাইব্রেরিতে পাঠানোর জন্য একটি ট্রাক এনেছে।’

ছাত্র ও সেনা সদস্যরা স্থানটি থেকে চুরি বা লুটপাটের বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। বিকেল ৫টায়, জনতা নিয়ন্ত্রণ করার সময়, কিছু লোককে একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে নির্মাণ সামগ্রী একটি ট্রাকে তোলার সময় ধরে ফেলা হয়।

দর্শনার্থীরা যখন বিষয়টি জানায়, তখন সেনা সদস্য এবং ছাত্ররা দ্রুত হস্তক্ষেপ করে।

‘ঠিকাদার’ পরিচয়দানকারী লুটেরাদের আটক করে ক্যাম্পের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।

একজন ছাত্র বলেন, ‘আমরা এখন স্থানটি পাহারা দিচ্ছি। আমরা আর কোনো লুটপাট বা ভাঙচুর হতে দেবো না।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং জাতীয় সংসদ ভবন

সোমবারের মতো গতকালও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সামনে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়েছিল, কিন্তু তারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি কারণ সেনাবাহিনীর সদস্যরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। সেনা সদস্যরা মূল ফটক পাহারা দিচ্ছিলেন।

স্ত্রী লুৎফা সাহানা এবং তাদের দুই সন্তানকে নিয়ে সামিউল আহসান পিএমওতে আসেন। সামিউল বলেন, ‘আমি গতকাল দেখেছি লোকজন পিএমওতে ঢুকছে, তাই আমি এসেছি, কিন্তু আজ আর ঢুকতে পারছি না।’

কিছু লোক ফটকে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য সেনা সদস্যদের কাছে অনুরোধ করছিলেন। পিএমও'র লনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্র, সোফা দেখা গেছে।

জাতীয় সংসদ ভবনের সামনেও একই ধরনের ভিড় দেখা গেছে। অনেকে রিকশা, অটোরিকশা এবং মোটরসাইকেলে করে গণভবনের পাশ থেকে জাতীয় সংসদ ভবনের ভিআইপি সড়ক দিয়ে ভবন চত্বরে প্রবেশ করে।

তবে, মূল সংসদ ভবন সেনাবাহিনীর সদস্যরা পাহারা দিচ্ছিলেন এবং কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছিলেন না। লোকজন ভবনের বাইরে খোলা আঙিনায় এবং হ্রদের ধারে হাঁটছিল।

দুই সন্তানকে নিয়ে রিকশায় করে আসা পারুল আক্তার বলেন, ‘গতকাল আমি টিভিতে দেখেছি, লোকজন নির্বিঘ্নে সংসদ ভবনের ভেতরে অবস্থান করছে। তাই আজ আমি এসেছি।’

ডেইলি স্টার অবলম্বনে