বাংলাদেশ ব্যাংকের পরবর্তী গভর্নর কে?

গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ত্যাগের চার দিন পর, গত শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পদত্যাগ করেন। তিনি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১২তম গভর্নর ছিলেন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো

বর্তমানে দেশের অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই পরিস্থিতিতে সবার মনে প্রশ্ন - পরবর্তী গভর্নর কে হবেন?

গত বৃহস্পতিবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে। এই সরকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক শেষে আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, তালুকদারের পদত্যাগপত্র তারা পেয়েছেন কিন্তু এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপযুক্ত গভর্নর খুঁজে বের করে ইউনূসের কাছে সুপারিশ করার ক্ষেত্রে সালেহউদ্দিন আহমেদকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

তারা আরও বলেন যে, নতুন গভর্নর হিসেবে দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে গভীর জ্ঞান এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

এখন পর্যন্ত শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক এবং বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতো বৈশ্বিক সংস্থাগুলোতে কাজ করা অর্থনীতিবিদদের নাম উঠে এসেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এর অর্থ হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাবেক গভর্নর তালুকদার ও ফজলে কবিরের মতো আমলাদের এই পদের জন্য সুপারিশ করবে না।

২০২২ সালের জুলাই মাসে তালুকদারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সে সময় বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং টাকার অবমূল্যায়নের মুখোমুখি ছিল।

তবে তার সময়ে এসব সমস্যার সঠিক সমাধান তিনি করতে পারেননি। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং ব্যাংকগুলোতে কর্পোরেট সুশাসনের অবনতির মধ্যে ব্যাংকিং খাতে উচ্চ পরিমাণ খারাপ ঋণ ও অন্যান্য অনিয়মের সমস্যা দেখা দেয়।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, নতুন গভর্নর খুঁজে পেতে সরকারকে তিনটি বৈশিষ্ট্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

প্রথমত, নতুন গভর্নরকে অবশ্যই সৎ হতে হবে। দ্বিতীয়ত, তাদের দেশের আর্থিক খাত সম্পর্কে বিস্তৃত জ্ঞান থাকতে হবে। তাদেরকে বেসরকারি খাত, পুঁজিবাজার এবং বীমা খাত সম্পর্কেও জানতে হবে, কারণ এগুলো অর্থনীতির জন্য অত্যাবশ্যক।

তিনি ব্যাংকিং খাতকে আর্থিক খাতের প্রধান স্তম্ভ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, পরবর্তী গভর্নরের অবশ্যই তৃতীয় যে গুণ থাকতে হবে তা হলো রাজনৈতিক প্রভাবসহ বিভিন্ন মহলের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ মোকাবেলা করার সাহস।

এ ছাড়া তাকে বিভিন্ন ব্যাংকের মালিক এবং তাদের ব্যালেন্স শিট সম্পর্কেও জানতে হবে।

হোসেন আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন মূলত প্রতিষ্ঠানের প্রধানের ওপর নির্ভর করে। তাই নতুন গভর্নরকেও স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে।’

তবে তিনি এমন একজন যোগ্য গভর্নর খুঁজে পাওয়া কঠিন বলেও মন্তব্য করেন এবং ব্যাংকিং খাতের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একজন তরুণ, উদ্যমী ব্যক্তিকে মনোনীত করার পরামর্শ দেন।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের একজন পেশাদার গভর্নর দরকার যিনি সত্য কথা বলবেন।’

তিনি আরও বলেন যে, ব্যাংকিং খাতের নেতৃত্বে এমন কাউকে থাকা উচিত যিনি আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করার জন্য সতর্ক এবং যথেষ্ট সাহসী।

তিনি বলেন, ‘দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা পেতে নতুন গভর্নরকে যোগদানের পর কিছুটা সাহস দেখাতে হবে।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, দেশের এই পদে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কাজ করবে এমন কাউকে প্রয়োজন।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান রহমান বলেন, নতুন গভর্নর দেশের ভেতর থেকে বাছাই করা জরুরি নয়। অন্যান্য দেশের মতো তাকে বিদেশ থেকেও নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।

ডেইলি স্টার অবলম্বনে