বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলির ঘটনা, আসামি হচ্ছেন কারা?

গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত এবং আহতদের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এতে আসামি হিসেবে স্থান পাচ্ছেন সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের শীর্ষ কর্তা এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

অ্যাকশনে পুলিশ

আন্দোলনকারীদের অন্যতম দাবি ছিল গুলি ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তা এবং তাদের নির্দেশদাতাদের বিচার। নবনিযুক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণের পরই এসব ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। সেদিন ও তার আগের দুয়েকদিনে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালানো হয়। রাজধানীর খিলক্ষেত, আদাবর, যাত্রাবাড়ী, বংশাল, লালবাগ, সূত্রাপুর, উত্তরখানসহ মোট ১০টি থানার সব পুলিশ সদস্য এ সময় মৃত্যুঝুঁকিতে ছিলেন। এর মধ্যে কয়েকটি থানা পুড়িয়ে দেওয়া হলে এক পর্যায়ে তারা রাজারবাগে গিয়ে আশ্রয় নেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আন্দোলন দমাতে গিয়ে এমন অবস্থার মুখোমুখি হতে হওয়ায় তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ। তারাই আগ্রহী হয়ে গুলির নির্দেশদাতাদের বিরুদ্ধে তথ্য দিচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, তদন্তে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর নির্দেশদাতাদের বিষয়ে জানা গেছে। তাদের নির্দেশনাগুলো কতটুকু যৌক্তিক ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আন্দোলন চলাকালীন ঢাকার মধ্যে কেবল যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে অনেক পুলিশের মৃত্যুঝুঁকি ছিল। তবে শাহবাগ, শহীদ মিনারসহ অনেক স্থানেই নিরস্ত্রদের ওপর গুলি চালিয়ে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

মামলায় নির্দেশদাতা হিসেবে গত সরকারের শীর্ষ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। কারণ আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনা অন্তত তিনবার আন্দোলনকারীদের শক্ত হাতে দমাতে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধেও নির্দেশদাতা হিসেবে মামলা হতে পারে।

এছাড়া শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর গুলি তথা হত্যার নির্দেশদাতাদের তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড গোয়েন্দা-দক্ষিণ) বিপ্লব কুমার সরকারসহ বিভিন্ন বিভাগের রেঞ্জ ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, জেলার পুলিশ সুপার (এসপি)।

এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে নির্যাতন করার ঘটনায় সাবেক ডিবিপ্রধান ও বর্তমান ডিএমপির ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধেও মামলা হচ্ছে।

রোববার (১১ আগস্ট) বাংলাদেশ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন মন্তব্য করেছেন, যাদের নির্দেশে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, নৃশংসতা ও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। অভিযুক্তদের কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও দেশে থাকা অনেকেই গোয়েন্দা নজরে রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ বিভাগ।

পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ-সহিংসতায় যেসব ছাত্র, সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তার প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে।