শেখ হাসিনার বক্তব্যে ঢাকার কড়া বার্তা দিল্লিকে!

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বুধবার ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে স্পষ্ট জানিয় দিয়েছেন যে, ‘ভারত থেকে আসা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য দুই দেশের মধ্যে উন্নত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য মোটেও সহায়ক নয়।’

মো. তৌহিদ হোসেন ও প্রণয় ভার্মা

বুধবার হাইকমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাতের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর শেখ হাসিনা গণমাধ্যমে বলেছিলেন যে, গত ৫ই আগস্ট তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করতে বাধ্য করার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত। তবে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এ ধরনের বক্তব্য অস্বীকার করেছেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আগামী দিনগুলিতে ভারতের সঙ্গে ‘জনগণকেন্দ্রিক সম্পৃক্ততা’ আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি সীমান্ত হত্যা বন্ধ, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পন্ন এবং অত্যাবশ্যক পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে বিশেষভাবে জোর দেন। এছাড়াও, বাংলাদেশের ঘটনাবলী নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা বন্ধে ভারতের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে বাংলাদেশ বদ্ধপরিকর।

সাক্ষাতকালে উপদেষ্টা হাইকমিশনারকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।

তিনি বলেন, গত সপ্তাহে সাহসী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণজাগরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছে।

‘বৈষম্য ও বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে নিয়ম-ভিত্তিক, ন্যায়সঙ্গত, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কর্তৃত্ববাদী ও নিপীড়নকারী শক্তির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ও জনগণের সম্মিলিত শক্তি বিজয়ী হয়েছে।’

তিনি ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে বলেন, ‘ভেদাভেদপূর্ণ সরকারি চাকরি নিয়োগ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নির্ভীক ছাত্র আন্দোলন শীঘ্রই জাতীয় পর্যায়ে বিপ্লবী সংগ্রামে রূপ নেয়।’

তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ও জনগণের অনুরোধে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন যে, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং অর্থনীতিকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনা।

সরকার অর্থবহ সংস্কার এবং স্থায়ী রূপান্তরের জন্য কাজ করছে, বিশেষ করে যুব সমাজের আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে।

তিনি বলেন, সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি পরিবেশ তৈরি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুমুখী গণতন্ত্রে রূপান্তর নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে নতুন দায়িত্ব গ্রহণের জন্য শুভেচ্ছা জানানোয় ভারত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ভারতীয় হাইকমিশনার পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে নতুন দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানান।

তিনি ভারতের জনগণের প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছার কথা উল্লেখ করেন এবং আগামী দিনগুলিতে উভয় দেশের জনগণের স্বার্থে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য ভারত সরকারের আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

উপদেষ্টা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুতির কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি উল্লেখ করেন যে, সরকার সকল ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনও ধরণের সহিংসতা বা বৈষম্য সহ্য করা হবে না।

তিনি আরও বলেন, সকল ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে।