স্বরাষ্ট্র সচিব বদলের ৩ দিনের মাথায় ফের বদল

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের নবনিযুক্ত সিনিয়র সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনকে মাত্র তিন দিনের মাথায় বদলি করা হয়েছে। গত ১৪ আগস্ট তাকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। আজ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে মোকাব্বির হোসেনকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে বদলি করা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লোগো

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমকে ২৫ বছর চাকরি পূর্ণ করায় অবসরে পাঠানো হয়। এরপর বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা পরিষদের (বিইপিআরসি) চেয়ারম্যান মো. মোকাব্বির হোসেনকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে সরকার মোকাব্বির হোসেনকে বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাতে চারজন নতুন উপদেষ্টা শপথ গ্রহণ করেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. সাখাওয়াত হোসেনের স্থলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্রে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার আটজন উপদেষ্টার মন্ত্রণালয় পুনর্বণ্টন করে, সাখাওয়াতকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

নতুন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করবেন। তিনি ২১ জানুয়ারি ২০০৩ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ পর্যন্ত তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের পিলখানা সদর দপ্তরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তৎকালীন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল জাহাঙ্গীর ২০ সদস্যের সেনা তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ওই হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।

২০০৯ সালের ডিসেম্বরে জাহাঙ্গীরকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। এক বছর পর তিনি অবসরে যান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত তার বিভিন্ন মন্তব্যের জন্য সংবাদ শিরোনাম হয়ে উঠেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়কারী তার কিছু মন্তব্যের সমালোচনা করেন, অন্যদিকে বিএনপি এবং এর তিনটি সহযোগী সংগঠন তার পদত্যাগ দাবি করে।

নির্বাচন কমিশনের সাবেক কমিশনার সাখাওয়াত ১১ আগস্ট সকল রাজনৈতিক দলকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘এখন, যদি তুমি মনে করো যে তুমি বাজার দখল করবে এবং চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হবে, তাহলে তুমি এগিয়ে যাও এবং কিছুদিনের জন্য এটা কর। কিন্তু আমি সেনাপ্রধানকে তোমাদের পা ভেঙে ফেলার জন্য অনুরোধ করেছি... আমার কিছু যায় আসে না, তোমরা সবাই নরকে যাও।’

পরের দিন তিনি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘এমন কিছু করবেন না যাতে আপনাদের জীবন বিপন্ন হয়। নতুন মুখ নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করুন।’

রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) আহত কিছু আনসার সদস্যের সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আপনাদের দলকে (আওয়ামী লীগ) কেউ নিষিদ্ধ করেনি। কোন দলকে নিষিদ্ধ করা একটি খারাপ সংস্কৃতি।’

আওয়ামী লীগের অবদানের কথা উল্লেখ করে অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘আমরা এটা (আওয়ামী লীগের অবদান) অস্বীকার করতে পারি না। দলকে পুনর্গঠিত করুন এবং যখনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তখন অংশগ্রহণ করুন।’

একই দিন, ছাত্র বিক্ষোভের অন্যতম সমন্বয়কারী হাসনাত আব্দুল্লাহ এক সমাবেশে বলেছিলেন, ‘আমরা দেখেছি উপদেষ্টারা খুনিদের (শেখ হাসিনা ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতা) পুনর্বাসনের কথা বলছেন। আমরা ওইসব উপদেষ্টাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আপনারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন।’

‘আমরা যেমন আপনাদের উপদেষ্টা বানিয়েছি, তেমনি আপনাদের ক্ষমতাচ্যুত করতেও দ্বিধা করব না,’ বলেন হাসনাত।