সরকারের নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন, কারা হচ্ছেন নতুন জেলা প্রশাসক?

নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের সকল জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে, সরকার নতুন মানদণ্ড প্রণয়ন করেছে। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যারা পদোন্নতি থেকে 'বঞ্চিত' ছিলেন, তাদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকারের লোগো

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন মানদণ্ডে বিসিএস ২৪, ২৫ এবং ২৭তম ব্যাচের ৬০০-এর অধিক কর্মকর্তার নাম রয়েছে। এদের অনেকেই বিগত ১৫-১৬ বছর ধরে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত ছিলেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ নিরসনের লক্ষ্যে তাদেরকে জেলা প্রশাসক পদে বিবেচনা করছে।

একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি করা মানদণ্ড এখন আর বিবেচনা করা হচ্ছে না। পরিবর্তে, নতুন তালিকায় মাঠ প্রশাসনে অভিজ্ঞ এবং রাজনৈতিক কারণে অবহেলিত কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, অনেক কর্মকর্তাকে তৎকালীন সরকার বিরোধী দলের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, যার ফলে ‘নেতিবাচক গোয়েন্দা প্রতিবেদন’ তাদের পদোন্নতি বাধাগ্রস্ত করে।

এ অবস্থায় সরকার জেলা প্রশাসক নিয়োগের শর্ত শিথিল করেছে যাতে এই কর্মকর্তারা ন্যায্য সুযোগ পান। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বিশেষ বিধান করেছে যাতে যোগ্য কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন।

নতুন নীতি অনুযায়ী, যারা কমপক্ষে এক বছর উপসচিব এবং কমপক্ষে দুই বছর উপপরিচালক বা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের মতো নির্দিষ্ট পদে কাজ করেছেন, তারা জেলা প্রশাসক পদের জন্য যোগ্য হবেন।

এছাড়াও, তাদের বিগত পাঁচ বছরে সন্তোষজনক শৃঙ্খলা রেকর্ড এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, তথ্যপ্রযুক্তি এবং বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে।

যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পূর্ববর্তী সরকারের আমলে অনেক কর্মকর্তাকে জেলা প্রশাসক পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। নীতি শিথিল করা এবং নতুন মানদণ্ড তৈরির সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন বলে মনে করছেন অনেকে।

গত শনিবার থেকে নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের তত্ত্বাবধানে বিসিএস ২৪তম ব্যাচের ৬০ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। আগামী তিন দিন ধরে আরও সাক্ষাৎকার চলবে, যেখানে ২৪তম ব্যাচ এবং তার পরবর্তী ব্যাচের কর্মকর্তারা অংশ নেবেন।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বেশ কয়েকজন উপসচিবকে জেলা প্রশাসক পদের জন্য বাছাই করা হয়েছে। সাক্ষাৎকারে কৃষি মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন।

এদিকে, পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত ৯ম থেকে ১৩তম বিসিএস ব্যাচের প্রায় ২০০ জন যুগ্ম সচিবকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত সুপারিশ শনিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। রবিবার বা সোমবারের মধ্যে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।

তবে, জানা গেছে যে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকারী কিছু কর্মকর্তাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জেলা প্রশাসক পদে বিবেচনা করা হবে না।