বাবুল আক্তার: সবাই বিচারক, আর আমি তথ্য প্রমাণ ছাড়াই খুনী

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনা নিয়ে নানা নাটকীয়তা হয়ে গেছে। তারপরও খুনীকে শনাক্ত করা যায়নি। দীর্ঘ ১৪ বছরের সংসার জীবনে এই দম্পতি দুই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মা হারা সন্তানদের নিয়ে কীভাবে কাটছে দিন তা বর্ণনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন বাবুল আক্তার।

বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতাল আদ-দ্বীনে কর্মরত বাবুল আজ সোমবার তার ছেলে মাহিরের জন্মদিনে জীবনের আকস্মিক পতন নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে সুদীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস লেখেন। সেখানে তিনি লেখেন, 'সন্তানদের প্রতি তাদের নানা-নানীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চাইনি তাই স্ত্রীর মৃত্যুর পর চট্রগ্রামের বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় শশুর-শাশুরির সঙ্গে থাকতে শুরু করি। কিন্তু সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে আমার সন্তানরা অভ্যস্ত হতে পারছিল না।'

বাবুল লেখেন, 'ছেলেটার সামনে তার মাকে খুন করা হয়েছে তাই নিয়মিত তার কাউন্সেলিং করাতে হতো। ডাক্তার বরাবরই বলতেন ছেলের সামনে মায়ের কথা না তুলতে। কিন্তু এতো আত্মীয়দের সবাইকে এই বিষয়ে নিষেধ করা সম্ভব ছিল না।'

স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, 'একদিন ছেলে এসে বলে, বাবা কান্না চেপে রাখলে কি বুকে ব্যাথা করে? বাসায় সবাই যখনই আম্মুর কথা বলে, আমার খুব কান্না পায় কিন্তু আমি কাঁদতে পারি না। তখন বুকে ব্যাথা করে।'

বাবুল আক্তার তাদের নিজের বাসায় ক্যাবল সংযোগ রাখেননি সন্তানদের কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতি থেকে দূরে রাখার জন্য। কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর পর নানা-নানীর বাসায় সন্তানদের দিন শুরু হতো টিভি সিরিয়াল দেখে। যে সন্তানরা জন্মের পর থেকে মার্জিত ভাষা ব্যবহারে অভ্যস্ত তারা অনভ্যস্ত পরিবেশে থেকে এবং পাশের বস্তির মানুষের গালমন্দ শুনে খিটখিটে স্বভাবের হতে থাকে।

বাবুল অভিযোগ করেন, সন্তানরা যখন তাদের নানা-নানীর বাসায় ছিল, তখন তার স্ত্রীর সদ্য এসএসসি পাশ করা খালাতো বোনকে মা ডাকতে শেখানো হয়েছিল। শুধু তাই নয়, স্কুলের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সময়ে ১৬ বছর বয়সী সেই মেয়েটিকে সন্তানদের মায়ের ভূমিকায় পাঠানো হতো।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, সন্তানদের মঙ্গল চিন্তা করে যখন তিনি আলাদা হতে চাইলেন তখন বাবুলকে তার বাবা-মা অথবা শশুর-শাশুরি, যেকোন একটি বেছে নিতে বলা হয়েছে। একই সাথে ১৬ বছরের ওই মেয়েটিকে বিয়ে করে তাদের বাসায় নতুন ঘর তুলে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু বাবুল এতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে শশুরবাড়ি থেকে হুমকি দেয়া হয়, "তোমারে পচাইয়া ছাড়মু, শান্তিতে থাকতে দিমু না।"

বাবুল তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, 'শশুর-শাশুরির অবাধ্য হয়ে ১৬ বছরের একটি মেয়েকে বিয়ে করে তাদের ঘরজামাই হয়ে না থাকার অপরাধে তারা একের পর এক আমার নামে কাল্পনিক অভিযোগ আনতে শুরু করেন। প্রথমে তারাই বলেছিলেন যে , আমার প্রতি তাদের কোন সন্দেহ নেই, আমার আর মিতুর সংসারে কোন অশান্তি ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে আমার নামে পরকীয়া, হত্যাসহ আরো নানা ধরণের অভিযোগ আনা হয়।'

২০১৬ সালের জুন মাসের পাঁচ তারিখে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে আততায়ীর গুলি ও ছুরির আঘাতে প্রাণ হারান বাবুলের স্ত্রী মিতু্। পরে বাবুল বাদী হয়ে স্ত্রী হত্যার মামলা করেন। মামলার তদন্তের একেক পর্যায়ে সামনে আসে একেক রকম ব্যাপার। এক পর্যায়ে স্ত্রী হত্যার জন্য বাবুলের প্রতিও সন্দেহ প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় পুলিশের চাকরিও হারান বাবুল।