দেশজুড়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে অর্ধেকই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম ও বরিশাল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সরবরাহ করা তথ্যে এ তথ্য জানা গেছে।

dengue mosquito 1এডিস মশা, ফাইল ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছরের জুলাই মাসে ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হয়। এ সময় ১২ জনের মৃত্যু হয় এবং ২ হাজার ৬৬৯ জন আক্রান্ত হন। আগস্ট মাসে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এ মাসে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয় এবং নতুন করে ৬ হাজার ৫২১ জন আক্রান্ত হন।

চলতি সেপ্টেম্বর মাসে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৩৮৪ জনে। আর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪১ জনে।

১ জানুয়ারি থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ১৪১ জন মারা গেছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘বিশেষ ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দুই মাস আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিলাম যে, সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। কিন্তু কেউ আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। নিয়মিত কার্যক্রম ছাড়াও, এই সংকটকালীন সময়ে লক্ষ্যভিত্তিক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

অধ্যাপক কবিরুল বাশার আরও বলেন, প্রায় প্রতি বছরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি টিম ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনা পর্যালোচনা করে। মূলত প্রতিটি মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ এবং মৃত্যুর হার কমানোর উপায় খুঁজে বের করাই এই পর্যালোচনার উদ্দেশ্য।

তবে এসব মৃত্যু পর্যালোচনা প্রতিবেদন গবেষক বা নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কতটা ভাগাভাগি করা হয়, তা নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন। এই তথ্য ও উপাত্ত ভবিষ্যতে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি প্রমাণভিত্তিক সমন্বিত মশা ব্যবস্থাপনা কৌশল গ্রহণ এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে কর্মমুখী মানসিকতার পরিবর্তে সেবামূলক মানসিকতা তৈরির আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘হটস্পট ব্যবস্থাপনার আওতায় যেসব বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী রয়েছে, সেই বাড়িগুলোর ২০০ মিটারের মধ্যে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা উচিত। উড়ন্ত এডিস মশা এবং লার্ভা ধ্বংস করতে হবে।’

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হাসপাতালের করিডরে অতিরিক্ত শয্যা স্থাপন করা হয়েছে।

এ বছর এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার রোগী হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে প্রায় ১০০ জন রোগী এখানে চিকিৎসাধীন। এই রোগীদের বেশিরভাগই ঢাকার বাসিন্দা। বিশেষ করে মানিকনগর, বাসাবো, গোলাপবাগ, দক্ষিণ মুগদা, মিরপুর এবং মন্দা এলাকার রোগী বেশি।

ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল এবং সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালেও একই চিত্র দেখা গেছে। প্রতিদিনই এসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ এম হাসান আরিফ বলেন, সব সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাকে নিয়মিত মশার প্রজননস্থল পর্যবেক্ষণ এবং ধ্বংস করে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়া রোধে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যখনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তখনই আমরা নানা ধরনের কার্যক্রম হাতে নেই। তবে শুরু থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এবং জনসচেতনতা তৈরি করা গেলে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়া অনেকাংশে কমানো সম্ভব।’

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, সারাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ৯০৬টি স্থানে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস এবং লার্ভিসাইড প্রয়োগ করা হয়েছে।

বুধবার সারাদেশে ১৮ হাজার ৭৩৩টি স্থানে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৫০৮টি এবং ঝুঁকিপূর্ণ পৌর এলাকায় ৭৪টি স্থান চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সব সিটি কর্পোরেশন ও ঝুঁকিপূর্ণ পৌরসভায় ২ হাজার ৬৮৯ জন মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মী কাজ করছেন।

এক জরুরি সভায়, স্থানীয় সরকার বিভাগ চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১০টি দল গঠন করেছে। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনসহ ১২টি সিটি কর্পোরেশন এবং সাভার, ধামরাই, তারাব এবং রূপগঞ্জের মতো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং সেগুলোর সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ডা. মো. শের আলী বলেন, এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস এবং পূর্ণাঙ্গ মশা নিধন করার মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নিয়মিত লার্ভিসাইডিং এবং এডাল্টিসাইডিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশেষ মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক আরও জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তিনটি তদারকি দল এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১০টি দল লার্ভিসাইড কার্যক্রমের স্থানীয়ভাবে তদারকি করছে।

তিনি আরও বলেন, এই তদারকি কার্যক্রম দুই পর্বে পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রথম পর্ব সকাল ৭টা থেকে ১০টা এবং দ্বিতীয় পর্ব বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১০টি অঞ্চলে পরিচালিত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব শুরু হয় ২০০০ সালে। ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৪৪ হাজার ২৪৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৮৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গত বছর ডেঙ্গুতে ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। ফলে গত বছরটি ছিল দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বাধিক মৃত্যুর বছর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, গত বছর তারা ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং ৩ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৯ জনের সুস্থতার তথ্য রেকর্ড করেছে।

সূত্র: ইউএনবি

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.