মালয়েশিয়ায় আরও ১৮ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা!

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ সফররত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ঘোষণা দিয়েছেন যে, প্রথম ধাপে আরও ১৮ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়ার বিষয়টি তার সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করবে।

ছবি - সংগৃহীত

এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা পুরো ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং স্বচ্ছ পদ্ধতি অনুসরণ করছি। আমাদের শ্রমিকের প্রয়োজন কিন্তু তারা যেন আধুনিক দাসে পরিণত না হয় সেদিকে আমরা সচেষ্ট। তারা বাংলাদেশি হোক বা অন্য কোন দেশের হোক, আমি আগেও এ কথা বলেছি, এখনও বলছি।’

প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন যাতে মালয়েশিয়ায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত কারও পক্ষে কেউ অবস্থান না নেয়।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস শ্রমিক ইস্যুতে এই ঘোষণার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অনুমান করা হয়, বর্তমানে প্রায় আট লক্ষ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় বসবাস ও কর্মরত আছেন। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চার লাখ লোক ২০২২ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে মালয়েশিয়া গেছেন।

দ্বিপাক্ষিক আলোচনার আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টা ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ড. ইউনূস তার চার দশকেরও বেশি সময়ের বন্ধুকে ঢাকায় স্বাগত জানাতে পেরে ‘খুবই আনন্দিত’।

তিনি ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ ও পূর্ববর্তী সরকারের নৃশংসতার কথা তুলে ধরেন।

প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেতাদের সঙ্গে তার দীর্ঘ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন।

দুই নেতাই একই গাড়িতে করে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকস্থলে যান যা তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বেরই প্রকাশ।

বৈঠকে রাজনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ - এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা হয়।

অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি, জনশক্তি রপ্তানি, উচ্চশিক্ষা সহযোগিতা, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আসিয়ানের পরবর্তী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাচ্ছে মালয়েশিয়া। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়।

এছাড়াও, আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আসিয়ানে ‘ক্ষেত্রভিত্তিক সংলাপ অংশীদার’ হিসেবে বাংলাদেশের যোগদানের বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচিত হয়।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরকে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও স্থায়ী বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করার একটি প্রকাশ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।’

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী 'সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারিত্ব' এবং বাংলাদেশে মালয়েশীয় কোম্পানি এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর সমস্যা দ্রুত সমাধানের ওপর জোর দেন।

তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি, সুশাসন এবং অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়গুলোতে তারা আপোস করবে না।

তার সঙ্গে ৫৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এসেছিলেন।

প্রায় এক দশক পর কোনো মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করলেন। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এটিই কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম বাংলাদেশ সফর।

বিমানবন্দর থেকে তাকে সরাসরি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়ে যাওয়া হয়।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে প্রধান উপদেষ্টা একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করেন এবং মতবিনিময় করেন।

বাংলাদেশে মালয়েশিয়া ৮ম বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ। মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো (যার মধ্যে বেশ কয়েকটি সরকারি তহবিলের মালিকানাধীন) বাংলাদেশে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে এবং শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে ঢাকা ত্যাগ করেন।