নতুন সভ্যতা গড়ার আহ্বান প্রফেসর ইউনূসের

নতুন এক সভ্যতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক এবং যুবশক্তিকে কাজে লাগানোর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার কপ-২৯ সম্মেলনে তিনি বলেন, এই সভ্যতা হবে আত্মসংরক্ষিত এবং আত্ম-শক্তিশালী।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস

‘জলবায়ু সংকট তীব্রতর হচ্ছে। আমাদের সভ্যতা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে, কারণ আমরা ধ্বংসাত্মক মূল্যবোধকে চলমান রাখছি,’ তিনি বলেন।

আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি ইলহাম আলিয়েভ বিশ্বনেতাদের দুই দিনের ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটে (ডব্লিউএলসিএএস) যোগ দিতে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সম্মেলন (কপ-২৯) ১১ থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।

‘জলবায়ু বিপর্যয়’ কে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, পরিবেশের নিরাপত্তার জন্য নতুন জীবনযাত্রার প্রয়োজন, যা জোর করে আরোপ করা হবে না, বরং এটি একটি পছন্দ হবে। তরুণরা এই জীবনযাত্রাকে একটি পছন্দ হিসেবে ভালোবাসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি তরুণ ‘ত্রি-শূন্য’ ব্যক্তি হিসেবে বড় হবে—শূন্য কার্বন নিঃসরণ, শুধুমাত্র সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলে শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীভূতকরণ এবং উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের রূপান্তরিত করে শূন্য বেকারত্ব।’

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী বলেন, প্রতিটি ব্যক্তি ‘ত্রি-শূন্য’ ব্যক্তি হিসেবে বড় হবে এবং সারাজীবন ‘ত্রি-শূন্য’ ব্যক্তি হিসেবে থাকবে। আর এভাবেই নতুন সভ্যতা গড়ে উঠবে।

‘এটি সম্ভব। আমাদের কেবল গ্রহের এবং এতে বসবাসকারী সকলের নিরাপত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন জীবনযাত্রা গ্রহণ করতে হবে। আজকের তরুণ প্রজন্ম বাকি কাজ করে দেবে। তারা তাদের গ্রহকে ভালোবাসে’ প্রফেসর ইউনূস বলেন। তিনি আশা করেন অন্যরা এই স্বপ্নে তার সঙ্গে যোগ দেবে।

‘আমরা যদি একসঙ্গে স্বপ্ন দেখি, তাহলে এটি ঘটবে,’ তিনি তার দীর্ঘদিনের ‘ত্রি-শূন্য’ নতুন বিশ্ব তৈরির স্বপ্ন শেয়ার করে বলেন।

জলবায়ু ধ্বংস মেরামত থেকে আরও ক্ষতি রোধে এই দৃষ্টিভঙ্গি তাদেরকে নেতৃত্ব দেবে উল্লেখ করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘এই গ্রহের মানব বাসিন্দারাই গ্রহের ধ্বংসের কারণ। আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করছি। আমরা এমন একটি জীবনযাত্রা ব্যবস্থা বেছে নিয়েছি যা পরিবেশের বিরুদ্ধে কাজ করে।’

অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান বলেন, ‘এই অর্থনৈতিক কাঠামো অসীম ভোগের ওপর নির্ভরশীল। যত বেশি ভোগ করবেন তত বেশি আপনার বৃদ্ধি হবে। যত বেশি বৃদ্ধি পাবেন তত বেশি অর্থ উপার্জন করবেন। মুনাফা সর্বাধিক করণকে অভিকর্ষ বল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।’

টিকে থাকার জন্য বিশ্বকে আরেকটি সংস্কৃতি, একটি প্রতি-সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে, যা ভিন্ন জীবনযাত্রার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রফেসর ইউনূস বলেন, এটি প্রাথমিকভাবে শূন্য ব্যক্তিগত মুনাফা—সামাজিক ব্যবসায়ের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে।

এই ব্যবসাকে সামাজিক এবং পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের জন্য অলাভজনক ব্যবসা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। “সামাজিক ব্যবসার একটি বিশাল অংশ পরিবেশ এবং মানবজাতিকে রক্ষার উপর কেন্দ্রীভূত হবে,” তিনি বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের জীবন কেবল সুরক্ষিত হবে না, বরং সুলভ স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মাধ্যমে গুণগতভাবে উন্নত হবে। এটি যুবদের জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে।’

সোমবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘের বৃহত্তম জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯-এ যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা বাকুতে পৌঁছান।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, প্রফেসর ইউনূস একটি ছোট প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং ১৪ নভেম্বর দেশে ফিরে আসবেন।