ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশকে উৎসাহিত করার পরামর্শ দিয়েছে আইসিজি

ব্রাসেলস-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নত করা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জন্য অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করা এই সংস্থাটি মনে করে, ইউরোপীয় কূটনীতিকদের নয়াদিল্লিকে বুঝতে সাহায্য করা উচিত যে, কেবল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা আর কার্যকর কৌশল নয়। তাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন না দেওয়ার যে ধারণা প্রচলিত, তা দেশে ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়াচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদে ভারতের জন্য ক্ষতিকর।

বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা

আইসিজির মিয়ানমার ও বাংলাদেশ বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক থমাস কিন বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এখনও উত্তেজনাকর এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

আইসিজি আরও বলেছে, ইইউ'র উচিত ঢাকাকে ভারতবিরোধী মনোভাব না ছড়ানোর জন্য উৎসাহিত করা এবং ভারতের যৌক্তিক উদ্বেগগুলি দূর করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া। উদাহরণস্বরূপ, পূর্বতন শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে শুরু হওয়া দ্বিপাক্ষিক প্রকল্পগুলি সম্পর্কিত সকল আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণের আশ্বাস দেওয়া।

‘বাংলাদেশ: গণতান্ত্রিক উত্তরণের দ্বিধা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে আইসিজি বলেছে, ইইউ এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উচিত রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা। জাতিসংঘের ২০২৪ সালের প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার মাত্র ৫৬ শতাংশ অর্থায়ন হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আন্তর্জাতিক তহবিল হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়। যদিও ইইউ এখনও বৃহত্তম দাতাদের মধ্যে একটি, কিছু ইউরোপীয় দেশ সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন সাহায্য বাজেট কমিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যা ইউরোপীয় তহবিলকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে। একইভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর পুনর্বাসনের জন্য গৃহীত শরণার্থীর সংখ্যা কমিয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে; ইইউ'র সদস্য রাষ্ট্রগুলির উচিত আরও রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা।

সর্বোত্তম পরিস্থিতিতেও, অধিকাংশ রোহিঙ্গা শরণার্থী দক্ষিণ বাংলাদেশের বিশাল শিবিরগুলিতে থাকবে এবং সীমান্ত জুড়ে সংঘাত অব্যাহত থাকায় মিয়ানমার থেকে আরও বেশি লোক আসতে পারে। ইইউ'র উচিত ঢাকার সঙ্গে মিলে শরণার্থীদের স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি এবং গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদানের ব্যয় হ্রাস করার নীতি গ্রহণ করা এবং ২০২৫ সালের শেষের দিকে একটি উচ্চ-স্তরের রোহিঙ্গা সম্মেলন আহ্বানের জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা। ইইউ'র উচিত ঢাকাকে আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য উৎসাহিত করা, যারা এখন যেকোনো প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার জন্য অপরিহার্য সংলাপকারী।

প্রতি বছর, আইসিজি একটি ‘ইইউ ওয়াচলিস্ট’ প্রকাশ করে, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলি শান্তির সম্ভাবনা বাড়াতে পারে তা চিহ্নিত করে। এই বছরের তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও মোল্দোভা, কলম্বিয়া, উত্তর কোরিয়া, সুদান, গ্রেট লেকস, ইউক্রেন, সিরিয়া, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন এবং ইরান রয়েছে।