ফখরুলের তীব্র প্রতিবাদ: আর কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যা চাই না

কুমিল্লায় এক যুবদল নেতাকে ‘নির্যাতন করে হত্যা’ করার তীব্র প্রতিবাদ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যার পুনরাবৃত্তি রোধে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হোক।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ফাইল ছবি

আজ শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি খেলার মাঠে বিএনপির ঢাকা উত্তর সিটি ইউনিটের আয়োজনে দুঃস্থদের মাঝে কাপড় বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

“আমরা দীর্ঘদিন ধরে হাসিনার শাসনামলে বিচারবহির্ভূত হত্যা, বেআইনি গ্রেপ্তার এবং জেলখানায় মৃত্যুর বিরুদ্ধে কথা বলে আসছি। দুঃখজনকভাবে, আমাদের একজন যুবদল নেতাকে গতকাল তুলে নিয়ে যৌথবাহিনী হত্যা করেছে, যা অত্যন্ত মর্মান্তিক,” তিনি বলেন।

“আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, দেশে আর কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যা আমরা দেখতে চাই না এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। যারা এই জঘন্য অপরাধ করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক।”

কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথুড়ি ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ৪২ বছর বয়সী তৌহিদুল ইসলামকে শুক্রবার ভোরে যৌথবাহিনী তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে, কারণ চিকিৎসকরা তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন পেয়েছেন।

বিএনপি নেতা উল্লেখ করেন, তাদের দলের অনেক নেতা-কর্মী, যার মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী এবং উত্তরা ছাত্রদল নেতা মুন্না, গুমের শিকার হয়েছেন।

“আমরা এ ধরনের ঘটনা আর দেখতে চাই না। আমরা দেশে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি, আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার দেখতে চাই। আমরা জনগণের প্রতি আর কোনো অবিচার দেখতে চাই না,” তিনি বলেন।

ফখরুল বিএনপির নেতা-কর্মীদের গুন্ডামি, জমি দখল, চাঁদাবাজি এবং অন্যান্য অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “যারা এ ধরনের কাজে জড়িত তারা দেশ ও দলের শত্রু।”

তিনি দলের নেতা-কর্মীদের জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনের জন্য আহ্বান জানান এবং পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে জনসমর্থন অর্জনের তাগিদ দেন।

এর আগে, মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেছিলেন যে, সাদা পোশাকে লোকজন কুমিল্লার যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।

এক বিবৃতিতে ফখরুল এই ঘটনায় সরকার ও প্রশাসনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের সহযোগীদের ভূমিকা ছিল কিনা তা জানার জন্য জরুরি তদন্তেরও দাবি জানান।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

তিনি বলেন, যুবদল নেতার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড জাতিকে ঝাঁকুনি দিয়েছে এবং জনগণের মধ্যে নতুন করে ভয় সৃষ্টি করেছে।

“কোনো সরকারি বাহিনীরই আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার নেই। অপরাধী যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অবৈধভাবে কাউকে নির্যাতন ও হত্যা করার কোনো অধিকার নেই,” ফখরুল বলেন।

তিনি তৌহিদুল ইসলামের বিচারবহির্ভূত হত্যার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান এবং হত্যাকাণ্ডের আসল দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

“আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসন যদি পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে দেশ আবার বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়বে। মানুষ ভয়ে থাকবে। বিচারবহির্ভূত হত্যা কখনোই সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা আনতে পারে না,” বিএনপি নেতা বলেন।

ফখরুল তৌহিদুল ইসলামের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

আজ সকালে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ফখরুল একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, "যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম হত্যার বিচার চাই"।