আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে ‘কমান্ড সেন্টার’ গঠনের নির্দেশ

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ‘কমান্ড সেন্টার’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন জমুনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার সময় তিনি এই নির্দেশনা দেন।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বক্স চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণি এবং পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, ডিএমপি, কোস্ট গার্ড এবং বিশেষ শাখার প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে অবশ্যই সর্বশেষ যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের একটি কমান্ড সেন্টার বা কমান্ড সদর দফতর স্থাপন করতে হবে, যা পুলিশ এবং সমস্ত নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নতুন কমান্ড কাঠামোটি দেশব্যাপী সকল নিরাপত্তা সংস্থা এবং থানার সঙ্গে ‘দক্ষতার সঙ্গে এবং নিবিড়ভাবে’ যোগাযোগ করবে।

তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’

‘এই বছরটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা কাউকে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করতে দেব না,’ তিনি আরও বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, পদচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার অনুচররা অরাজকতা সৃষ্টি এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে। আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং সবাইকে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষায় যত্নবান হওয়ার এবং ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর যেকোনো আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের নির্দেশ দেন।

‘আমরা যদি আমাদের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে না পারি তবে আমাদের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে আমাদেরকে অত্যন্ত স্বচ্ছ হতে হবে,’ তিনি বলেন।

পবিত্র রমজান মাসে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও পুলিশকে নির্দেশ দেন অধ্যাপক ইউনূস।

পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম সভায় জানান, গত বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা তদন্তের জন্য পুলিশ ১০টি টিম গঠন করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা পুলিশকে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার এবং নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন যেন কোনো নির্দোষ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হয়।

বাহারুল আলম আরও জানান, গণআন্দোলনের সময় ভারত থেকে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করার জন্য ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করেছে বাংলাদেশ।

‘আমরা একটি আবেদন করেছি। আমরা আশা করি শীঘ্রই আমরা সাড়া পাব,’ তিনি সভায় বলেন।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, পুলিশের কড়া নিরাপত্তার কারণে রাজধানীতে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা কমেছে।