সেনাপ্রধান: আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাহিনীর মধ্যে ঐক্য জরুরি

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অন্যতম কারণ বাহিনীর মধ্যে ঐক্যের অভাব বলে মন্তব্য করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। আজ (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শহীদদের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান

সেনাপ্রধান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। আমরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে ব্যস্ত। একে অপরকে উত্তেজিত করতে ব্যস্ত। এটি অপরাধীদের জন্য সুযোগ। তারা জানে, এ সময় অপরাধ করলে সহজেই পার পেয়ে যাবে। ঐক্যবদ্ধ হলেই এই পরিস্থিতি মোকাবেলা সম্ভব।’

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বিভক্তি সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো সমস্যা বা জটিলতা দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা উচিত। উদ্দেশ্যহীন ছোটাছুটি কেবল ক্ষতিই ডেকে আনবে।

বিগত সময়ে কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থাকলেও পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই এবং এনএসআই ইতিবাচক অবদান রেখেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অপরাধে জড়িতদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে, অন্যথায় এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটবে। তবে, পদক্ষেপ এমন হওয়া উচিত নয় যা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দেয়।

জেনারেল ওয়াকার বলেন, অনেক পুলিশ কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব পালনে দ্বিধাগ্রস্ত কারণ তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, কেউ কেউ জেলে আছেন। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের তদন্তের কারণে র‍্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই এবং এনএসআই আতঙ্কিত। তদন্ত অবশ্যই হতে হবে এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে, তবে এটি এমনভাবে করা উচিত যাতে এই সংস্থাগুলো দুর্বল না হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মর্মান্তিক মৃত্যুকে স্মরণ করে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে গভীর শোকের দিন হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। সেনাপ্রধান দৃঢ়ভাবে বলেন, এই নৃশংসতা কেবল তৎকালীন বিডিআর সদস্যরাই করেছিল, কোনো সেনা সদস্য জড়িত ছিল না।

বিদ্রোহে বহিরাগত বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন তথ্য প্রকাশ করবে। অন্যায়ভাবে শাস্তি পাওয়া ব্যক্তিদের উদ্বেগের বিষয়ে একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেলের নেতৃত্বে একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৫১ জন ব্যক্তির জন্য সুপারিশ জমা দেওয়া হয়েছে, যার বেশিরভাগই অনুমোদন করা হয়েছে। নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীও একই ধরনের পর্যালোচনা প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে। তবে প্রমাণিত অপরাধীদের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।