পথশিশুদের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ২৪ লাখ টাকা

শুধু মাত্র পুঁজিপতিদেরই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকবে। এমনটাই যেন মনে করে আসছে অনেকে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যেগে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দেয়া হয়েছিল পথশিশুদের। একটি টকটকে লাল গোলাপ বিক্রি করেই অর্থাৎ মাত্র ১০টাকার বিনিময়ে তারা খুলতে পারবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ পথশিশুদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার এ সুযোগ করে দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

ওই নির্দেশনার পর মাত্র দুই বছরের কম সময়ে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ৭২৫ জন পথশিশু ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলে। যাতে জমা পড়েছে ২৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে।

অধিকাংশ পথশিশুর কোনও অভিভাবক না থাকায়, দেশের ১৩টি এনজিও প্রতিনিধিরা তাদের অভিভাবক হয়ে এ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছে। যে ১৩টি এনজিও পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব দেখভাল করছে তারা হলো- মাসাস, সাফ, উদ্দীপন, অপরাজেয় বাংলাদেশ, ব্র্যাক, নারী মৈত্রী, সিপিডি, প্রদীপন, সাজিদা ফাউন্ডেশন, এএসডি, শক্তি বিদ্যালয়, ইবিসিআর প্রকল্প ও পরিবর্তন।

পথশিশুরা সবচেয়ে বেশি হিসাব খুলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকে। এই ব্যাংকটি ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৫৭ জন পথশিশুর হিসাব খুলেছে এবং তাদের জমা হয়েছে ১০ লাখ ১৯ হাজার টাকা। অন্যদিকে ৫৪৬ জন পথশিশুর হিসাব খুলে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বেসরকারি পূবালী ব্যাংক। এই ব্যাংকে পথশিশুদের জমানো টাকার পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, 'পথ শিশুরা ব্যাংক সেক্টরে যেতে পারত না। তারা কোন ব্যাংক অফিসে ঢুকতে পর্যন্ত পারত না। আমাদের উদ্যোগের কারণে তারা এখন অ্যাকাউন্টের মালিক। তাদের টাকা নষ্ট না হয়ে একটি নির্দিষ্ট ভবিষ্যতের লক্ষে জমা হচ্ছে। যা তাদের জীবন মানে পরিবর্তন আনবে।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, 'পথশিশু ও কর্মজীবী শিশু-কিশোরদের ব্যাংকে টাকা রাখা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের ফলে। পথশিশুদের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা তৈরি, কষ্টে উপার্জিত অর্থের সুরক্ষা, পথভ্রষ্ট হওয়ার প্রবণতা রোধ করার লক্ষেই দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক হিসাব খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।'

২০১৪ সালে পথশিশুদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার উদ্যোগ নেয়ার পর প্রাথমিকভাবে ১০টি ব্যাংক পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব খোলার দায়িত্ব নেয়। পরে আরও ৭টি ব্যাংক এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়। এই ১৭টি ব্যাংক হলো- সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, দ্য সিটি ব্যাংক, আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক সোসাল ইসলামী, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।