টিপু মুনশির বিরুদ্ধে মামলা, নজরুলের সম্পত্তি জব্দ, আতিয়ারসহ ২৩ জনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বৃহস্পতিবার প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও তার স্ত্রী ইরেনা মালবিকা মুনশির বিরুদ্ধে প্রায় ১০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেছে।

টিপু মুন্সি, নজরুল ইসলাম মজুমদার ও আতিয়ার রহমান

এছাড়া, ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত নাসা গ্রুপ ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলায় তার ৬টি বাড়ি, ৮টি প্লট এবং ৫৫টি কোম্পানির ৫৬.৬ কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

একইসঙ্গে আদালত দুর্নীতির মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিয়ার রহমান, জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত এবং সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম আজাদসহ ২৩ জনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

মামলার বিবরণী অনুযায়ী, দুদক ঢাকা-১ এর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩২ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন জানান, টিপুর স্ত্রী ইরেনা মালবিকা মুনশির বিরুদ্ধে প্রায় ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এছাড়া, দুদক দম্পতির দুই মেয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের মালিকানাধীন পূর্বাচলে ৬টি বাড়ি এবং ৮টি প্লট জব্দ করার নির্দেশ দেন।

একইসঙ্গে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে নজরুল ইসলামের ৫৫টি কোম্পানির ৫৬.৬ কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জব্দকৃত স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে গুলশানের ৪৭ নম্বর প্লটে ১৪ তলা ভবন (বাজার মূল্য ৫০ কোটি টাকা), গুলশানের ৩ নম্বর প্লটে ১৪ তলা বাড়ি (বাজার মূল্য ৭০ কোটি টাকা), মহাখালীতে ২ তলা বাড়ি (বাজার মূল্য ৪ কোটি টাকা), একই এলাকায় ৪ তলা বাড়ি (বাজার মূল্য ৬ কোটি টাকা), একই এলাকায় আরেকটি বাড়ি (বাজার মূল্য ৪ কোটি টাকা) এবং তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ৩ তলা ভবন (বাজার মূল্য ৫০ কোটি টাকা)।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি, দুদক নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে ৭৮১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে।

এদিকে, একই আদালত বৃহস্পতিবার দুর্নীতি মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিয়ার রহমান, জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত এবং সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম আজাদসহ ২৩ জনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। দুদকের উপ-পরিচালক শাহজাহান মিরাজের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দেন।

অন্যান্য ২০ জন আসামির মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান, সাবেক সহকারী পরিচালক ইসমত আরা বেগম, জনতা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, মো. ইমদাদুল হক, নগিবুল ইসলাম দ্বীপু, আর.এম. দেবনাথ, মো. আবু নাসের, সঙ্গীতা আহমেদ এবং সাবেক পরিচালক অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র নাথ।

এছাড়াও মামলায় জনতা ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আজমুল হক, সাবেক এজিএম অজয় কুমার ঘোষ, জনতা ভবন কর্পোরেট শাখার সাবেক ম্যানেজার (শিল্প ঋণ-১) মো. গোলাম আযম, নির্বাহী প্রকৌশলী (এসএমই বিভাগ) মো. শাহজাহান, এসইও মো. এমদাদুল হক, সাবেক ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আব্দুল জব্বার, সাবেক ডিএমডি মো. গোলাম ফারুক, সাবেক ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওমর ফারুক, আননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস বাদল, মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন এবং পরিচালক মো. আবু তালহার নাম রয়েছে।

দুদকের উপ-পরিচালক মো. নজমুল হোসেন ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-১ এর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে আতিয়ার রহমান ও আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

একই আদালত দুর্নীতির অভিযোগে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, তার স্ত্রী শাহীন আক্তার, মেয়েরা আনিকা ফারিহা জামান ও মাইসা সামিহা জামানের বিরুদ্ধেও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

দুদকের উপ-পরিচালক মোজাম্মেল হোসেন তার আবেদনে উল্লেখ করেন যে, কমিশন খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করছে।

নিউএজ অবলম্বনে