নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ বলেছেন, দেশের সকল মানুষকে নিয়ে নারীবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “যে নারীবিরোধী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তাদেরকে দেশের সকল মানুষকে নিয়ে মোকাবেলা করতে হবে।”

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ বক্তব্য রাখেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুর্শিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সমাজে এখনও অনেকে নারীদের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে তাদেরকে ছোট করে দেখেন। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন রোধ করে বৈষম্যমুক্ত সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে নারীর পাশে দাঁড়ানো এবং তাদেরকে সহযোগিতা করার কোন বিকল্প নেই।

“নারীদের ছোট করে দেখার যে মানসিকতা, তা আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় জাতি হিসেবে আমাদের কোন ভবিষ্যৎ নেই,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নারীর উপর যেসব আক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, যা 'নতুন বাংলাদেশ' গড়ার স্বপ্নের সম্পূর্ণ বিপরীত।

“এই নতুন বাংলাদেশে নারী-পুরুষ সকলের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে এসব অধিকার প্রতিষ্ঠা করব,” বলেন তিনি।

নারীর অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের নারীরা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসীম সাহসিকতার সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

তিনি বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে নারীরা রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখছেন।

তিনি উল্লেখ করেন যে, পতিত স্বৈরশাসন দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে। তাই তিনি সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা দেশে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকলকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানান।

“নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক ঐক্য গড়ে তুলুন। একে অপরের পাশে দাঁড়ান। সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে সরকারকে সহযোগিতা করুন,” বলেন তিনি।

নারী কল্যাণ নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করা সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার।

তিনি বলেন, নারীরা প্রায়শই সহিংসতার শিকার হলেও অনেক সময় তারা কোথায় অভিযোগ করবেন তা জানেন না। তাই তাদের অভিযোগ জানাতে সহায়তা করার জন্য একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে।

নারীদের আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য ২০২৫ সালে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নের কাজ চলছে বলেও তিনি জানান।

কিছুদিন আগে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, 'যুব উৎসব ২০২৫'-এ রেকর্ড সংখ্যক নারী ফুটবল, ক্রিকেট, কাবাডি, ভলিবল এবং বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, এই উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২৭.৪ লাখ নারী প্রায় ৩,০০০ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, দর্শকদের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং অংশগ্রহণের ব্যাপারে পুরুষদেরও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন রয়েছে।

সূত্র: বাসস