বিশ্ববাজারে অস্ত্র বিক্রির নতুন কৌশল ভারতের

বিশ্ববাজারে অস্ত্র রপ্তানি বাড়াতে নতুন কৌশল নিয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। যেসব দেশ এতদিন অস্ত্রের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভর করতো, তাদের টার্গেট করে সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে নয়াদিল্লি। খবর রয়টার্সের।

ভারতের তৈরি ‘আকাশ’ ক্ষেপণাস্ত্র

ভারতের প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অস্ত্র রপ্তানি বাড়াতে নতুন করে উদ্যোগী হয়েছে মোদি সরকার। মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সেসব দেশ ঐতিহাসিকভাবেই রাশিয়ার অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল, কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিকল্প খুঁজছে- এমন সব দেশকে টার্গেট করা হচ্ছে।

রাশিয়া ২০২২ সালের শুরুর দিকে ইউক্রেনে সামরিক হামলা শুরু করে। এরপর থেকেই বিশ্বজুড়ে রুশ অস্ত্র সরবরাহ চাপের মুখে পড়ে, কেননা, রাশিয়ার সমরাস্ত্র কারখানাগুলো তখন পুরোপুরি যুদ্ধের চাহিদা মেটাতেই ব্যস্ত। আর সেই সুযোগে কিছু দেশ ভারতের দিকে যেমন ঝুঁকেছে, তেমনি ভারতও কম দামে অস্ত্র সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

ভারতীয় সূত্র বলছে, ইউরোপে যেখানে ১৫৫ মিমি আর্টিলারি গোলার দাম ৩০০০ ডলারের বেশি, সেখানে ভারত সেটি দিচ্ছে ৩০০-৪০০ ডলারে। একইভাবে ভারত হাউইটজার বিক্রি করছে ৩০ লাখ ডলারে, যেখানে ইউরোপীয় বাজারে দাম প্রায় দ্বিগুণ। এখন পর্যন্ত ভারতের রপ্তানি মূলত গোলাবারুদ ও ছোট অস্ত্রভিত্তিক হলেও নয়াদিল্লি সরকার চাচ্ছে, ক্ষেপণাস্ত্র, হেলিকপ্টার ও যুদ্ধজাহাজ বিক্রি করতে।

ভারত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৪.৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করেছে, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৬২ শতাংশ বেশি। এখন মোদি সরকারের লক্ষ্য, ২০২৯ সালের মধ্যে এই রপ্তানির পরিমাণ আরও ৬ বিলিয়ন ডলার বাড়ানো।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সম্প্রতি এক্স পোস্টে লিখেছেন, প্রতিরক্ষা রপ্তানিতে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত।

অন্তত চারজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, লক্ষ্য পূরণে বিদেশি দূতাবাসগুলোতে প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এই কর্মকর্তারা কিছু অস্ত্র বিক্রির আলোচনায় সরাসরি অংশ নিচ্ছেন। তাছাড়া বিদেশি প্রতিনিধিদল ও দেশীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর মধ্যে বৈঠকের ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে নয়াদিল্লি সরকার।

ভারত আগামী ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে অন্তত ২০টি নতুন দেশে প্রতিরক্ষা সংযুক্তি পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, আলজেরিয়া, মরক্কো, তাঞ্জানিয়া, গায়ানা, ইথিওপিয়া, আর্জেন্টিনা ও কম্বোডিয়া। একই সঙ্গে পশ্চিমা দূতাবাসগুলো থেকে কিছু প্রতিরক্ষা সংযুক্তি ফিরিয়ে এনে নতুন লক্ষ্যমাত্রার দেশে পাঠানো হবে। এই সংযুক্তি দলের কাজ হবে ভারতীয় অস্ত্রের বিপণন এবং স্বাগতিক দেশের সামরিক চাহিদা বিশ্লেষণ।

সূত্র জানায়, একইসঙ্গে প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর রপ্তানি উৎসাহে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের (এক্সিম) মাধ্যমে সহজ শর্তে, কম সুদে ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।