ফ্ল্যাটে মা-ছেলের মরদেহ, পাশে চকলেট খেয়ে বেঁচে ছিল ৪ বছরের শিশু

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির ওয়েকফিল্ড এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে এক মা ও তার ৮ বছর বয়সী ছেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। হৃদয়বিদারক এই ঘটনায় তাদের পাশেই ৪ বছর বয়সী শিশুকন্যাকে জীবিত পাওয়া গেছে, যে কিনা মায়ের মৃত্যুর পর কয়েকদিন ধরে শুধু চকলেট খেয়ে বেঁচে ছিল। মৃতরা হলেন লিসা কটন (৩৮) এবং তার ছেলে নাজির মিলিয়েন (৮)। জীবিত উদ্ধার হওয়া শিশুটির নাম প্রমিস। এ খবর জানিয়েছে গালফ্ নিউজ ও নিউইয়র্ক পোস্ট।

বাসার সামনে পুলিশ প্রহরা ও শিশু প্রমিস

লিসার বাবা হুবার্ট কটনের বরাতে খবরে বলা হয়, কয়েকদিন ধরে মেয়ে লিসা ও নাতি নাজিরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরে তিনি লিসার বড় মেয়েকে তাদের খোঁজ নিতে পাঠান। সেখানে অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছে তিনি মর্মান্তিক দৃশ্যের সম্মুখীন হন। ঘরে ঢুকে তিনি দেখতে পান, তার ভাই নাজিরের নিথর দেহের চারপাশে পোকামাকড় ঘুরছে এবং ছোট বোন প্রমিস বিছানায় মৃত মায়ের পাশে চকলেট মাখা অবস্থায় শুয়ে আছে।

প্রমিসকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল এবং সে তার দাদা হুবার্ট কটনের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

চিকিৎসকদের প্রাথমিক ধারণা, অ্যাজমা আক্রান্ত লিসা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অন্যদিকে, অপরিণত বয়সে জন্ম নেওয়া নাজির খাওয়ার জন্য ফিডিং টিউবের ওপর নির্ভরশীল ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, খাদ্য ও পানির অভাবেই তার মৃত্যু হয়েছে।

ওই ভবনের অন্যান্য বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কিছুদিন ধরেই অ্যাপার্টমেন্টটি থেকে দুর্গন্ধ আসছিল এবং তারা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে লিসা বা তার সন্তানদের বাইরে দেখেননি। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলেও, কোনো জরুরি অবস্থার স্পষ্ট লক্ষণ না পাওয়ায় তারা প্রাথমিকভাবে বাড়িতে প্রবেশ করেনি। জানা গেছে, সোশ্যাল ওয়ার্কাররা ওই বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশের অনুমতির জন্য আদালতে আবেদন করার প্রক্রিয়ায় ছিলেন।

নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, লিসার মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা ছিল এবং শিশু সুরক্ষা সংস্থার সঙ্গে তার একটি মামলা চলমান ছিল। ২০২১ সালে সন্তানদের বিপদের মুখে ফেলার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল।

এই মর্মান্তিক ঘটনায় প্রতিবেশীরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি) এখনও মৃত্যুর সঠিক কারণ ও পুরো ঘটনাটির তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।