জাতিসংঘের হুঁশিয়ারি: গাজায় মানবিক কার্যক্রম ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে

জাতিসংঘ সোমবার সতর্ক করেছে যে, ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযান এবং কঠোর অবরোধের কারণে গাজা উপত্যকায় মানবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়েছে। আট সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা এই পরিস্থিতির ফলে ত্রাণ বিতরণ ও জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রদান প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

গাজা উপত্যকার ছবি

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘চলমান সামরিক অভিযান এবং সাহায্য ও বাণিজ্যিক পণ্য প্রবেশে বাধার কারণে মানবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’

তিনি জানান, গাজায় ত্রাণসামগ্রীর মজুদ আশঙ্কাজনকভাবে কমে আসছে। খাদ্যের সরবরাহ প্রায় ফুরিয়ে আসায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

ডুজারিক বলেন, ‘আমাদের অংশীদাররা জানিয়েছেন, মেন্যু পরিবর্তন করে চালু রাখার চেষ্টা সত্ত্বেও সপ্তাহান্তে আরও ১৬টি কমিউনিটি কিচেন বন্ধ করতে হয়েছে।’

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, খাদ্যের অভাবে এই সপ্তাহে আরও বেশ কয়েকটি কিচেন বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যেগুলোর ওপর গাজার মানুষ নিয়মিত খাদ্য সহায়তার জন্য নির্ভরশীল। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি গত সপ্তাহেই তাদের খাদ্য মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিল।

গাজায় অপুষ্টির ক্রমবর্ধমান সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ডুজারিক জানান, জাতিসংঘ ও তার অংশীদাররা নতুন করে খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে প্রায় ১০,০০০ মারাত্মক অপুষ্টির ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ১,৬০০টি চরম পর্যায়ের মারাত্মক অপুষ্টির ঘটনা।’

শুধু খাদ্য নয়, চিকিৎসার ক্ষেত্রেও চরম সংকট চলছে। গণহতাহতের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে চিকিৎসার সরঞ্জামও কমে আসছে এবং গুরুতর আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম "শেষ হয়ে যাচ্ছে" বলে জানান ডুজারিক। তিনি আরও সতর্ক করেন যে, বিশেষজ্ঞ জরুরি চিকিৎসা দল, বিশেষ করে অর্থোপেডিক ও প্লাস্টিক সার্জনদের গাজায় প্রবেশাধিকার ক্রমবর্ধমানভাবে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।

এদিকে, শিক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ডুজারিক জানান, গত সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনীর জারি করা নতুন উচ্ছেদ আদেশের কারণে ৯০,০০০-এর বেশি শিক্ষার্থী ও ২,০০০ শিক্ষকের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে এবং শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ও বিনোদনমূলক সহায়তার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক দপ্তর ওসিএইচএ’র বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সর্বশেষ আদেশের ফলে আরও হাজার হাজার পরিবার তাদের বাসস্থান ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত ১৮ মার্চ গাজায় পুনরায় আক্রমণ শুরু করে, যা ১৯ জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তিকে লঙ্ঘন করেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের নৃশংস হামলায় গাজায় ৫২,৩০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ইসরায়েলের উপর চাপ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত নভেম্বরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এছাড়া, এই উপত্যকায় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি হয়েছে।