রাষ্ট্র গঠনে ঐকমত্যের আহ্বান: স্বৈরতন্ত্রের পুনরাবৃত্তি রোধে ছাড় দেওয়ার বিকল্প নেই

জাতীয় সংসদ ভবনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ১২ দলীয় জোটের এক গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংলাপে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ভবিষ্যতে স্বৈরতন্ত্রের পুনরুত্থান ঠেকাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নীতিগুলোর বিষয়ে দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছানোর ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এজন্য সকল পক্ষকে কিছুটা ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে।

বৈঠকের ছবি

রবিবার সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এই বৈঠকে অধ্যাপক রীয়াজ সূচনা বক্তব্যে বলেন, কমিশনের মূল লক্ষ্য হলো সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করা। এই সনদ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা হিসেবে কাজ করবে এবং এটি তৈরি হবে শুধুমাত্র সেসব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে, যেগুলোতে দলগুলো একমত হবে।

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের সবাইকে এক জায়গায় আসতে হবে। সব বিষয়ে হয়তো আমরা একমত হতে পারব না, কিন্তু রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক স্তম্ভগুলোতে একমত হয়েই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে।’

তিনি সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তরুণদের সেই আন্দোলনের ফলেই আজ রাষ্ট্র পুনর্গঠন ও একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আলোচনা সম্ভব হচ্ছে, যার যথাযথ মূল্যায়ন জরুরি।

ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কমিশন কেবল ‘অনুঘটক’-এর ভূমিকা পালন করবে উল্লেখ করে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, দলগুলোর নিজেদের মধ্যেও আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি গণমাধ্যমকেও রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে অভিন্ন অবস্থানে আসতে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান।

১২ দলীয় জোটের পক্ষে নেতৃত্ব দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য গণতন্ত্রের অংশ হলেও তারা দ্রুত একটি সমাধানে পৌঁছাতে আগ্রহী। একইসাথে তিনি নিশ্চিত করতে চান যেন ভবিষ্যতে কোনো স্বৈরশাসক ক্ষমতা দখল করতে না পারে এবং সংবিধানের যথেচ্ছ পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব না হয়।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং ১২ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জোটের নেতাদের মধ্যে ছিলেন শাহাদাত হোসেন সেলিম (এলডিপি), অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা (জাতীয় দল), ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম (জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম), অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী (বিকল্পধারা), রাশেদ প্রধান (জাগপা), লায়ন ফারুক রহমান (লেবার পার্টি), শামসুদ্দিন পারভেজ (কল্যাণ পার্টি), মাওলানা আব্দুল রাকিব (ইসলামি ঐক্য জোট), আবুল কাশেম (ইসলামিক পার্টি), ফিরোজ মোহাম্মদ লিটন (পিএনপি) এবং এম এ মান্নান (নয়া গণতান্ত্রিক পার্টি)।

আলোচনায় সরকারের গঠিত পাঁচটি কমিশনের দেওয়া ১৬৬টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ১২ দলীয় জোট ১১১টি প্রস্তাবে একমত পোষণ করেছে, ৪৮টিতে দ্বিমত জানিয়েছে এবং ৭টি প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো মতামত দেয়নি।

উল্লেখ্য, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একই দিন বিকেলে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির সঙ্গেও সংলাপে বসার কথা রয়েছে।