উভয়সংকটে ইসরায়েল, নেতানিয়াহুকে সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি

ইসরায়েলের চিফ অফ স্টাফ আইয়াল জামির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং বেশ কয়েকজন মন্ত্রীকে সতর্ক করে বলেছেন যে, গাজায় স্থল অভিযান সম্প্রসারিত করলে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের জীবনহানি হতে পারে।

চিফ অফ স্টাফ আইয়াল জামির

রবিবার ইয়েদিওত আহারোনোত পত্রিকা জামিরের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘যুদ্ধের দুটি প্রধান লক্ষ্য—হামাসকে নির্মূল করা এবং জিম্মিদের উদ্ধার করা—একসঙ্গে অর্জন করতে গেলে একটি উভয়সংকট রয়েছে, কারণ একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই দুটি লক্ষ্য মাঠপর্যায়ে সাংঘর্ষিক হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে যে একটি পূর্ণমাত্রার স্থল অভিযান জিম্মিদের জীবনহানির কারণ হতে পারে।’

পত্রিকাটি যুদ্ধের অগ্রাধিকার নিয়ে ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে স্পষ্ট মতবিরোধের বিষয়টিও উল্লেখ করেছে।

এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায়, গাজায় আটক জিম্মিদের পরিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, `সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা ছাড়া ইসরায়েলের কোনো বিজয় হতে পারে না। তাদের হারানো হবে একটি জাতীয় পরাজয়।'

তারা আরও যোগ করে, ‘জাতীয় ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিটি বন্দীর মুক্তির ওপর নির্ভর করে।’

জামিরের এই সতর্কতা এমন এক সময়ে এলো যখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় পরিকল্পিত স্থল অভিযান সম্প্রসারণের জন্য কয়েক হাজার রিজার্ভ সৈন্যকে তলবের আদেশ জারি করতে শুরু করেছে, যা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শুক্রবার জামির, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি নিরাপত্তা পরামর্শ সভায় নেতানিয়াহু স্থল অভিযান বিস্তৃত করার জন্য রিজার্ভ সৈন্য সমাবেশের অনুমোদন দেন।

ইসরায়েলের অনুমান অনুযায়ী, গাজায় এখনো ৫৯ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ৯,৯০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী আছেন। ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, সেখানে তারা নির্যাতন, ক্ষুধা এবং চিকিৎসায় অবহেলার শিকার হচ্ছেন, যা অনেক মৃত্যুর কারণ হয়েছে।

শনিবার, হাজার হাজার ইসরায়েলি তেল আবিবের কেন্দ্রে সরকারের এই অভিযানকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে তা তীব্রতর করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তারা সতর্ক করে যে, এটি করলে অবশিষ্ট জিম্মিদের মৃত্যু হতে পারে এবং নিহতদের কোনো চিহ্ন মুছে যেতে পারে।

অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় ৫২,৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গত নভেম্বরে নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

গাজায় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।