স্থানীয় স্লিপার সেল দিয়েই পাহেলগামে হামলা!

ভারত-শাসিত কাশ্মিরের পাহেলগামে সাম্প্রতিক সশস্ত্র হামলার পেছনে স্থানীয় স্লিপার সেলের সক্রিয় ভূমিকা ছিল বলে দাবি করেছেন আত্মসমর্পণকারী এক সাবেক জঙ্গি। একসময় নিজেই এরকম একটি সেলের সদস্য থাকা ওই যুবক জানিয়েছেন, স্থানীয় সদস্যরাই জঙ্গিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে হামলার পরিকল্পনা তৈরি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করেছিল।

পাহেলগামের নিরাপত্তাবাহিনীর টহল

সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়া টুডে’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই সাবেক জঙ্গি চাঞ্চল্যকর এই তথ্য প্রকাশ করেন। তার দাবি অনুযায়ী, ‘কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয়জন স্থানীয় সদস্য নিয়মিত জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিল এবং হামলার আগেই তারা গোটা পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছিল।’

তিনি জানান, পাহেলগামের কাছে বৈসরন উপত্যকায় হামলার প্রায় এক মাস আগেই জঙ্গিদের সঙ্গে স্লিপার সেলের সদস্যদের এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। এরপরই এলাকায় নজরদারি চালিয়ে ভারতীয় সেনার গতিবিধি ও অবস্থানের বিস্তারিত তথ্য হামলাকারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

স্লিপার সেলের কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘শ্রীনগরে বা পাহেলগামে হামলা চালাতে গেলে এলাকার ভিতরের খবর না জেনে কিছু করা সম্ভব নয়। বাইরে থেকে আসা কেউ বুঝতে পারবে না কতজন সেনা কোথায়, কীভাবে মোতায়েন আছে। সেই কাজটাই করে স্লিপার সেল—তারা রেকি করে, তথ্য সংগ্রহ করে এবং সরবরাহের দায়িত্বও নেয়।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই ধরনের সেল মূলত স্থানীয়দের নিয়েই গঠিত হয়। শুধু তথ্য জোগানোই নয়, জঙ্গিদের জন্য খাদ্য, অস্ত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করাও তাদের কাজের অংশ।’

এদিকে, পাহেলগাম হামলার তদন্তভার গ্রহণ করেছে ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। তদন্তকারী এক সূত্রের উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, হামলায় লস্কর-এ-তৈয়বার কমান্ডার ফারুক আহমেদের নেতৃত্বাধীন নেটওয়ার্ক সহায়তা করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই নেটওয়ার্কই স্লিপার সেলের মাধ্যমে হামলাকারীদের সব রকম সহায়তা দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রায় তিন-চার বছর ধরে স্লিপার সেলের সদস্য হিসেবে কাজ করার কথা স্বীকার করেন ওই যুবক। তিনি জানান, ২০১৫ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। প্রথমে জঙ্গলে থাকা জঙ্গিদের খাবার পৌঁছে দিলেও পরে অস্ত্র ও সরঞ্জাম পরিবহণের কাজ করতেন। একবার গ্রেনেড হামলার সময় সেনার হাতে ধরা পড়ে আড়াই বছর জেলেও ছিলেন তিনি।

নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার মাধ্যমেই অনেক হামলা সংগঠিত হয়েছে। এখন বুঝি, ১১০ শতাংশ ভুল করেছিলাম’।

তিনি আরও জানান, তার দুই বন্ধু সক্রিয় জঙ্গি ছিলেন এবং বিভিন্ন সময়ে এনকাউন্টারে তার ১৩-১৪ জন বন্ধু নিহত হয়েছেন।