জার্মান চ্যান্সেলর নির্বাচনে প্রথম দফায় হোঁচট খেলেন ফ্রিডরিখ মেৎস

মঙ্গলবার জার্মান পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত চ্যান্সেলর নির্বাচনে প্রথম দফা ভোটে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন রক্ষণশীল নেতা ফ্রিডরিখ মেৎস। এই ঘটনায় তার জোটের সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও এক অপ্রত্যাশিত রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হলো।

ফ্রিডরিখ মেৎস

বার্লিন থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, গোপন ব্যালটে অনুষ্ঠিত এই ভোটে মেৎসের পক্ষে ৩১০ জন সংসদ সদস্য ভোট দেন, যেখানে তার বিপক্ষে ভোট পড়ে ৩০৭টি। চ্যান্সেলর হিসেবে নির্বাচিত হতে তার অন্তত ৩১৬ ভোটের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন ছিল। উল্লেখ্য, ভোটের সময় তিনজন আইনপ্রণেতা ভোটদানে বিরত ছিলেন এবং একটি ভোট বাতিল হয়। এছাড়া, অসুস্থতা বা অন্যান্য কারণে নয়জন সংসদ সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন।

মেৎসের নেতৃত্বাধীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট জোট (সিডিইউ/সিএসইউ) এবং এর কনিষ্ঠ জোটসঙ্গী সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)-র জার্মান সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগে একত্রে ৩২৮ আসনের সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও এই অপ্রত্যাশিত ফলাফলকে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। গোপন ব্যালটের কারণে জোট দলগুলোর কতজন আইনপ্রণেতা মেৎসের চ্যান্সেলর পদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন এবং তাদের দলীয় পরিচয় কী, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হয়নি।

জার্মানির যুদ্ধোত্তর ইতিহাসে এই প্রথম কোনো চ্যান্সেলর প্রার্থী প্রথম দফা ভোটে জয়ী হতে ব্যর্থ হলেন। এই ফলাফলের পর, জোটের নেতারা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে তাদের সিনিয়র উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। মঙ্গলবারেই দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণ হবে নাকি শুক্রবার পর্যন্ত তা বিলম্বিত হবে, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা আসেনি।

জার্মান সংবিধান অনুযায়ী, বুন্ডেসটাগের ওয়েবসাইট অনুসারে, যদি কোনো চ্যান্সেলর প্রার্থী প্রথম দফা ভোটে জিততে ব্যর্থ হন, তাহলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কাউকে নির্বাচিত করার জন্য পার্লামেন্টের হাতে দুই সপ্তাহ সময় থাকে। মেৎস যদি মনে করেন দ্বিতীয় দফায় জয় সম্ভব, তাহলে তিনি এই দুই সপ্তাহের মধ্যে যেকোনো সময় আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। এমনকি এই প্রক্রিয়ায় একাধিকবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং নতুন প্রার্থীরাও এই দৌড়ে শামিল হতে পারেন।

সিডিইউ/সিএসইউ-এর সংসদীয় দলের নেতা ইয়েন্স ষ্পান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এসপিডি এবং সিডিইউ/সিএসইউ দলীয় জোটের প্রস্তাব অনুযায়ী ফ্রিডরিখ মেৎস আবারও নির্বাচনে দাঁড়াবেন।’ তবে এর সময়সূচী নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, গত ২৩ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর কয়েক সপ্তাহের দীর্ঘ আলোচনার শেষে সোমবার মেৎসের ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটরা মধ্য-বামপন্থী এসপিডি-র সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে জোট চুক্তি স্বাক্ষর করে। ওই নির্বাচনে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটরা ২৮.৫% ভোট পেয়ে আকস্মিক নির্বাচনে জয়ী হলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা ১৬.৪% ভোট পেয়ে তাদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ফলাফল করলেও, বুন্ডেসটাগে স্থিতিশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠনে তারা গুরুত্বপূর্ণ জোটসঙ্গী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।