রুশ জ্বালানি আমদানিতে দাঁড়ি টানছে ইইউ

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বুধবার ঘোষণা করেছেন যে, ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার যুদ্ধ সক্ষমতা দুর্বল করা এবং ইউরোপীয় জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার করার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

উরসুলা ভন ডার লিয়েন

স্ট্রাসবার্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় ভন ডার লিয়েন বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব এখনও একটি ‘মূল তহবিল’।

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের শুরুতে আমরা প্রতি মাসে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য ১২ বিলিয়ন ইউরো ব্যয় করতাম। বর্তমানে তা কমে ১.৮ বিলিয়ন ইউরোতে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি আরও যোগ করেন যে মস্কোর ওপর ইউরোপের জ্বালানি নির্ভরতা শেষ করার জন্য চূড়ান্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির যুগ শেষ হতে চলেছে।’

ভন ডার লিয়েন কমিশনের উপস্থাপিত একটি নতুন রোডম্যাপে অন্তর্ভুক্ত বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের রূপরেখা তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে সমস্ত নতুন চুক্তি নিষিদ্ধ করা এবং ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ স্পট মার্কেট থেকে আমদানি বন্ধ করা।

তিনি বলেন, ইইউ ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ রাশিয়া থেকে পাইপলাইন এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিও নিষিদ্ধ করবে।

তিনি জ্বালানি উৎসের বহুমুখীকরণে ইইউ-এর অগ্রগতির প্রশংসা করেন। এক্ষেত্রে তিনি রাশিয়ার তেল আমদানি দশগুণ হ্রাস এবং গ্যাসের ওপর নির্ভরতা ৪৫% থেকে ১৩%-এ নেমে আসার কথা উল্লেখ করেন।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর সৃষ্ট জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াসহ বৈশ্বিক অংশীদারদের ধন্যবাদ জানান।

ভন ডার লিয়েন রাশিয়ার জ্বালানি পুনরায় চালুর আহ্বান সম্পর্কে সতর্ক করে এ ধরনের পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক মাত্রার ভুল’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

জ্বালানি নীতির পাশাপাশি, তিনি ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের বিষয়ে ইইউ-এর দৃষ্টিভঙ্গির জন্য তিনটি মূল অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেন: সামরিক সমর্থন বৃদ্ধি, রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদ লাভের পথ ত্বরান্বিত করা।

রাশিয়াকে ইউরোপের জন্য ‘স্থায়ী হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন, যার মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনীয় নির্মাতাদের সরাসরি ইইউ-এর পক্ষ থেকে কার্যাদেশ প্রদান।

ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদ প্রসঙ্গে ভন ডার লিয়েন বলেন, এই জোটে একীভূত হওয়াই হবে কিয়েভের জন্য ‘সবচেয়ে শক্তিশালী নিরাপত্তা গ্যারান্টি’।

তিনি আরও বলেন, ইইউ সদস্যপদ লাভের আলোচনার প্রথম ধাপগুলো শুরু করার জন্য কাজ করছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে সবগুলো শুরু করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।