জেনেভায় মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন: শুল্কযুদ্ধের জট খুলবে কি?
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনে এ সপ্তাহান্তে জেনেভায় এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। এই আনুষ্ঠানিক আলোচনার মূল লক্ষ্য হলো শত শত বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে নড়িয়ে দেওয়া পাল্টাপাল্টি শুল্কযুদ্ধের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করা। বিশ্বের এই দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যকার চলমান সংঘাতের বর্তমান পরিস্থিতি বেশ জটিল।
প্রতীকী ছবি
বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে উভয় দেশই কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কিছু কিছু চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত করেছে, এমনকি কয়েকটি ক্ষেত্রে মোট শুল্কহার ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এছাড়াও ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ির মতো নির্দিষ্ট খাতের আমদানিতেও চীনকে লক্ষ্য করে শুল্ক বসানো হয়েছে। চীনের শুল্ক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা দেশটির মোট রপ্তানির ১৬.৪ শতাংশ।
এর জবাবে বেইজিংও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে এবং জানিয়েছে যে তারা ‘শেষ পর্যন্ত’ এই লড়াই চালিয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব মতে, গত বছর চীনে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৪৩.৫ বিলিয়ন ডলার। চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘চাপ প্রয়োগের’ অভিযোগে একাধিক মামলা দায়ের করেছে। শুধু তাই নয়, বেইজিং বিভিন্ন মার্কিন কোম্পানির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বোয়িংয়ের ক্রয়াদেশ বাতিল, গুগলের বিরুদ্ধে একচেটিয়া আচরণের তদন্ত এবং টমি হিলফিগার ও কেলভিন ক্লেইনের মতো ব্র্যান্ডের মালিক পিভিএইচ কর্প এবং বায়োটেক জায়ান্ট ইলুমিনাকে ‘অবিশ্বস্ত সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা। এছাড়াও, চীন সেমিকন্ডাক্টর, চিকিৎসা প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিকস পণ্যের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান বিরল খনিজ রপ্তানিতেও কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
এই বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব উভয় দেশের অর্থনীতিতেই স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বছর চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৯৫.৪ বিলিয়ন ডলার, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অসন্তোষের কারণ। বাণিজ্যযুদ্ধ তীব্রতর হওয়ায় চীন ২০২৫ সালের প্রবৃদ্ধির জন্য শুধুমাত্র রপ্তানির ওপর নির্ভরতা কমানোর কথা ভাবছে, যদিও ২০২৪ সালে দেশটির রপ্তানি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক চীনের কোভিড-১৯ পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনীতি, আবাসন খাতের ঋণ সংকট এবং দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদার ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রেও এর প্রভাব পড়েছে। গত মাসে দেশটির শিল্পখাতে মন্দা দেখা দিয়েছে এবং প্রথম প্রান্তিকে অপ্রত্যাশিত অর্থনৈতিক সংকোচনের জন্য কর্মকর্তারা এই শুল্কযুদ্ধকেই দায়ী করছেন।
রাবোব্যাঙ্কের সিনিয়র চীন অর্থনীতিবিদ টিওয়ে মেভিসেন মনে করেন, ‘দুই দেশই এখন উপলব্ধি করছে যে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়া সম্ভব নয়। এই বাণিজ্যযুদ্ধে উভয় পক্ষই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোনো পক্ষ কৌশলগত সুবিধা পেলেও, তারা যুদ্ধ-পূর্ব অবস্থার চেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকবে।’
এপ্রিল মাসে ডব্লিউটিও প্রধান সতর্ক করে বলেছিলেন, এই সংঘাতের জেরে দুই দেশের মধ্যে পণ্য বাণিজ্য ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। সম্প্রতি চীন অভ্যন্তরীণ ভোগব্যয় বাড়াতে কয়েক দফা সুদের হার কমিয়েছে, যা বিশ্লেষকদের মতে শুল্কযুদ্ধের ধাক্কা সামলানোর একটি বড় ইঙ্গিত।
ধারণা করা হচ্ছে, এই শুল্ক চীনের জিডিপি থেকে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কমিয়ে ফেলতে পারে, যেখানে চলতি বছর দেশটির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ শতাংশ। ইলেকট্রনিকস, যন্ত্রপাতি, টেক্সটাইল ও পোশাকের মতো চীনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রপ্তানি খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। একইসঙ্গে, চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন শিল্প ও ভোক্তাদের ব্যাপক নির্ভরশীলতার কারণে এই শুল্ক পরোক্ষভাবে আমেরিকান উৎপাদক ও ভোক্তাদের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
অর্থনৈতিক চাপ উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আসতে বাধ্য করলেও জেনেভার বৈঠক থেকে বড় ধরনের কোনো অগ্রগতির সম্ভাবনা কম। চীন জানিয়েছে, তাদের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি এবং শুল্ক প্রত্যাহারের প্রথম পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রকেই নিতে হবে। তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’ থাকবে বলেও জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, এই বৈঠকের লক্ষ্য কোনো ‘বড় বাণিজ্যচুক্তি’ নয়, বরং ‘উত্তেজনা প্রশমন’ করা। তবে বিশ্লেষকরা আশা করছেন, শনিবারের প্রাথমিক আলোচনা শেষে কিছু শুল্ক কমানোর ঘোষণা আসতে পারে।
জার্মান মার্শাল ফান্ডের ইন্দো-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বনি গ্লাসার মনে করেন, ‘এ বছর আরোপিত কিছু শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত সুইজারল্যান্ডের আলোচনার একটি সম্ভাব্য ফল হতে পারে।’ এশিয়া সোসাইটির লিজি লি-এর মতে, ‘উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে একটি প্রাথমিক ও প্রতীকী পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, তবে তা মূল সংঘাতের সমাধান করবে না। স্থিতিশীলতা ও একটি নিয়ন্ত্রণমূলক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করাই সম্ভবত এই আলোচনার সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ফল।’
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.