ইউরোপ ভ্রমণে নতুন কড়াকড়ি, নিয়ম না মানলেই মোটা অঙ্কের জরিমানা

ইউরোপ ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন? তাহলে কিছু নতুন নিয়ম জেনে রাখা ভালো, কারণ এই গ্রীষ্মে মহাদেশটির বিভিন্ন দেশ পর্যটকদের ‘অশোভন আচরণ’ নিয়ন্ত্রণে বেশ কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। সামান্য ভুল, যেমন খালি পায়ে হাঁটা বা স্যান্ডেল পরে গাড়ি চালানো, আপনার ছুটির বাজেটে বড় ধাক্কা দিতে পারে। এমনকি বিমানে নিজের আসনে বসে থাকার নিয়ম ভাঙলেও তাৎক্ষণিক জরিমানার মুখে পড়তে হতে পারে।

চলতি বছর তুরস্কের আন্তালিয়ায় বিমান পুরোপুরি থামার আগে সিটবেল্ট খোলা বা আসন থেকে উঠে দাঁড়ানোকে ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করে ৬২ ইউরো জরিমানা চালু করা হয়েছে। শুধু তুরস্ক নয়, ইউরোপজুড়ে পর্যটকদের জন্য এমন জরিমানার এক নতুন ঢেউ শুরু হয়েছে। তবে প্রশ্ন হলো, হঠাৎ কেন এই কড়াকড়ি? কর্তৃপক্ষ বলছে, এর মূল লক্ষ্য স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা সুরক্ষিত রাখা এবং পর্যটকদের মধ্যে দায়িত্বশীল আচরণ উৎসাহিত করা। লন্ডনে স্প্যানিশ পর্যটন অফিসের প্রেস বিভাগের প্রধান জেসিকা হার্ভে টেলর বলেন, ‘ছুটির দিনে দায়িত্বশীল আচরণকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অভিজ্ঞতা ভালো রাখার জন্যই এগুলো তৈরি করা হয়েছে।’

স্পেনের মালাগায় পর্যটকদের জন্য ‘ইমপ্রুভ ইয়োর স্টে’ নামে ১০টি আচরণবিধি চালু করা হয়েছে। সম্মানজনক পোশাক পরা, যেখানে-সেখানে আবর্জনা না ফেলা বা বেপরোয়াভাবে ই-স্কুটার না চালানোর মতো নিয়ম না মানলে ৭৫০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। দেশটির ম্যালোর্কা বা ইবিজা দ্বীপে জনসমক্ষে মদ্যপান করলে জরিমানার পরিমাণ তিন হাজার ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া স্পেন, গ্রিস, ইতালি, ফ্রান্স ও পর্তুগালে স্যান্ডেল বা চপ্পল পরে গাড়ি চালালে ৩০০ ইউরো পর্যন্ত অর্থদণ্ড হতে পারে।

পর্তুগালের আলবুফেইরাতেও সৈকতের বাইরে সাঁতারের পোশাক পরলে দেড় হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হতে পারে। শহরটিতে জনসমক্ষে প্রস্রাব করা বা শপিং কার্ট যত্রতত্র ফেলে রাখাও এখন অবৈধ। একইভাবে, ইতালির ভেনিসের খালে সাঁতার কাটলে ৩৫০ ইউরো এবং সিনকে তেরের পাহাড়ি পথে অনুপযুক্ত জুতা পরে উঠলে আড়াই হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। ফ্রান্স সৈকত বা খেলার মাঠে ধূমপান করে আগুন লাগানোর জন্য ঘটনাস্থলেই ৯০ ইউরো জরিমানা আরোপ করেছে।

মূলত, অতিমাত্রায় পর্যটনের চাপে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ায় এমন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ম্যালোর্কার ক্যালভিয়া শহরের মেয়র হুয়ান আন্তোনিও আমেঙ্গুয়াল বলেন, ‘পর্যটন কখনোই স্থানীয় নাগরিকদের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।’ এই জরিমানাগুলো একদিকে যেমন স্থানীয়দের ক্ষোভ প্রশমিত করছে, তেমনই পর্যটকদেরও একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—অন্যের সংস্কৃতি ও পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

তবে এই নতুন নিয়মগুলো কতটা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পর্তুগালের গোটুআলগারভে সংস্থার পরিচালক রবার্ট অ্যালার্ড জানান, আলবুফেইরার হোটেলগুলোতে নতুন নিয়ম নিয়ে লিফলেট ও পোস্টার থাকলেও অনেক পর্যটকই এ বিষয়ে সচেতন নন। দায়িত্বশীল পর্যটন বিশেষজ্ঞ বিরগিত্তা স্পি-কোনিগ মনে করেন, শুধু জরিমানা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে আচরণ পরিবর্তন করা কঠিন। তার মতে, ‘ভালো দিকনির্দেশনা, স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি এবং স্থানীয় ও পর্যটকদের আকাঙ্ক্ষার সমন্বয় ছাড়া খুব কমই পরিবর্তন হবে।’ তবে একটি বিষয় পরিষ্কার—ইউরোপের সূর্য, বালি আর সমুদ্র তাদেরই স্বাগত জানাবে, যারা সংযত ও সংবেদনশীল আচরণ করবেন।

বিবিসি অবলম্বনে