ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি: ট্রাম্পের ঘোষণার পরই লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটি পুরোদস্তুর যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর, রবিবার ভোরে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে।
ভারত ও পাকিস্তানের পতাকা
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, পাকিস্তানের ‘বারবার লঙ্ঘনের’ জবাবে তাদের বাহিনী পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান দাবি করেছে যে তারা যুদ্ধবিরতিতে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ এবং তাদের বাহিনী ভারতের যেকোনো লঙ্ঘন ‘দায়িত্ব ও সংযমের’ সঙ্গে মোকাবেলা করছে।
ভারত-শাসিত কাশ্মিরের শ্রীনগরে এএফপির সংবাদকর্মীরা বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মিরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন যে বিতর্কিত অঞ্চলের কার্যত সীমান্ত রেখা—লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর ‘মাঝে মাঝে গোলাগুলি চলছে’। তবে, এই অভিযোগগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি এবং তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে শনিবার, ডোনাল্ড ট্রাম্প অপ্রত্যাশিতভাবে ঘোষণা করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তিনি উভয় দেশকে ‘সাধারণ জ্ঞান এবং অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা’ ব্যবহারের জন্য অভিনন্দন জানান।
শনিবার গভীর রাতে ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প পুনরায় পোস্ট করে ভারত ও পাকিস্তানের নেতাদের ‘বর্তমান আগ্রাসন বন্ধ করার সময় এসেছে’ এটা বোঝার জন্য প্রশংসা করেন এবং উভয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ‘উল্লেখযোগ্যভাবে’ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, তিনি দিল্লি ও ইসলামাবাদের সঙ্গে কাজ করবেন যাতে ‘হাজার বছর পর’ কাশ্মির নিয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায় কি না, তা দেখা যায়।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এর আগে জানিয়েছিলেন যে, উভয় পক্ষ বিকেল ৫টা থেকে ‘স্থল, আকাশ ও সমুদ্রে সব ধরনের গুলিবর্ষণ ও সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করবে’। কিন্তু পরবর্তীতে তিনিই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘বারবার লঙ্ঘনের’ অভিযোগ তোলেন।
ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির ‘বিশ্বস্ত বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ এবং ‘কিছু এলাকায় ভারতের দ্বারা সংঘটিত লঙ্ঘন সত্ত্বেও আমাদের বাহিনী দায়িত্ব ও সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে’।
এই সাম্প্রতিক সংঘাতের সূত্রপাত হয় গত মাসে ভারত-শাসিত কাশ্মিরে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনা থেকে। দিল্লি এই হামলার জন্য পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লষ্কর-ই-তয়্যেবাকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ কোনো ধরনের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে এবং একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা রবিবার এই যুদ্ধবিরতিকে ‘একটি অস্থায়ী পরিস্থিতি’ বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, ‘আমেরিকানরা পাকিস্তানিদের প্ররোচিত করেছে’ এবং ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষেত্রে একটি বিশাল সাফল্য ছিল’।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০১৯ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার কাশ্মিরের সীমিত স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে রাজ্যটিকে দিল্লির সরাসরি শাসনের অধীনে নেওয়ার পর থেকে জঙ্গিরা কাশ্মিরে তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এই ভূখণ্ড নিয়ে দেশ দুটি একাধিকবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। উভয় দেশই পুরো অঞ্চলের মালিকানা দাবি করে, তবে পৃথক অংশ পরিচালনা করে।
পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মিরের মুজাফফরাবাদের আইটি পরামর্শক বিলাল সাব্বির যুদ্ধবিরতিকে ‘একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধে শুধু সৈন্যরাই মারা যায় না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেসামরিক মানুষ মারা যায়—এবং এক্ষেত্রে কাশ্মিরের জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হতো।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, তিনি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স উভয় পক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পরই এই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে। রুবিও এক্সে আরও বলেছেন যে তারা ‘একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তৃত ইস্যুতে আলোচনা শুরু করতে’ সম্মত হয়েছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ মার্কিন হস্তক্ষেপের ‘প্রশংসা’ করেছেন, কারণ তার দেশ দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মিরে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা চেয়ে আসছে। তবে ভারত ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের মধ্যস্থতার বিরোধিতা করে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান এই যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘যুদ্ধবিরতিটি তাড়াহুড়ো করে এবং এমন এক সময়ে করা হয়েছিল যখন উত্তেজনা ছিল সর্বোচ্চ’। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ভারত সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের চেয়ে চুক্তিটিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে এবং এর আওতায় থাকা বিস্তৃত আলোচনায় তারা আগ্রহী নয়। এটি বজায় রাখা চ্যালেঞ্জিং হবে’।
যুদ্ধবিরতির খবরে ব্রিটেন, ইরানসহ বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘ স্বস্তি প্রকাশ করেছে। চীন, যারা ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিবেশী, জানিয়েছে যে বেইজিং ‘গঠনমূলক ভূমিকা অব্যাহত রাখতে ইচ্ছুক’ এবং যেকোনো ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.